শিক্ষাঙ্গনে কোনো বিশৃঙ্খলা বা জবরদস্তি কাম্য নয়-ছাত্রলীগের দণ্ডাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার অপরাধে বুধবার রাতে শহীদুল্লাহ হলের ৪৪ জন আবাসিক ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগ। বিতাড়িত ছাত্ররা কার্জন হলের সামনের চত্বরে অবস্থান নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের কথা জানান।


কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য তাঁরা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে হলে ফিরে যেতে পেরেছিলেন। এ ব্যাপারে হল কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া দুঃখজনক। হলে ছাত্রদের আসন বরাদ্দ করে থাকে হল কর্তৃপক্ষ। কে হলে থাকবে বা না থাকবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের, অন্য কারও নয়। দুর্ভাগ্য, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠন হলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে থাকে। তাদের সম্মতি ছাড়া হলে আসন পাওয়াও কঠিন। তাদের হুকুম না মানলে হলে আসন পেয়েও অনেকে হলে থাকতে পারেন না। বুধবারের ঘটনা ছিল তার একটি উদাহরণ মাত্র।
যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার এখতিয়ার আছে। তবে দেখার বিষয়, সেই কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে। বুধবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে নগরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই সমালোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা আমলে নেবেন বলে আশা করি। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু এই সংবর্ধনা সভায় যোগদান নিয়ে শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ যে কাণ্ড করেছে, তা কেবল অনৈতিক নয়, অমার্জনীয়ও।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে বলে ফলাও প্রচার করেন। এ ক্ষেত্রে দেশবাসী তার বাস্তবায়নই দেখতে চাইবে। ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘কর্মসূচিতে যোগ না দিলে তাঁদের হল থেকে বের করে দেবেন না তো কী করবেন?’ এ ধরনের ঔদ্ধত্য দেখানোর সাহস তাঁরা কীভাবে পান? কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের দণ্ডাদেশ জারি করে থাকেন। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই।

No comments

Powered by Blogger.