নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে আরও তৎপর হতে হবে-মাদকসংক্রান্ত অপরাধ

গত কয়েক বছরের অপরাধের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, মাদকসংক্রান্ত অপরাধ আট বছর ধরে শীর্ষ অবস্থানে আছে এবং গত ১০ বছরে তা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। আমাদের সমাজে মাদকদ্রব্যের বিস্তৃতি কত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রচেষ্টায় যে বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে, পরিসংখ্যানের তথ্য থেকেই তা স্পষ্ট।


এসব তথ্য মাদক নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরে।
মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মাদকসেবীর ওপরই পড়ে না, তার মাধ্যমে পরিবার এবং সমাজও আক্রান্ত হয়। মাদকসেবীরা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। তাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ হওয়ায় মাদকের ছোবলে দেশের ভবিষ্যৎ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে মাদকের ব্যবহার রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট পথ হলো, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি কঠিন করে তোলা এবং মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
পুলিশ আন্তরিক হলে মাদকের পাচার ও ব্যবসা প্রায় বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেল, পুলিশের একটি অংশ নিজেই মাদক পাচারকারীদের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত একটি টোকেন-ব্যবস্থা চালু করেছিল, যার মাধ্যমে পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে মাদকের চালান গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারত। একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের মাদক পাচারকারীদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে অবাধে মাদক পাচার করতে দেওয়ার এমন ঘটনা সমাজের জন্য গুরুতর অনিষ্টের কারণ। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বিশ্বে দ্রুত ছড়াচ্ছে নতুন মাদকদ্রব্য, অথচ বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। পপি ও কোকেনের চাষ কমে যাওয়ায় হেরোইন ও কোকেনের জায়গা দখল করছে এমফিটামিন, ক্যাটামিন, পাইপারজিনস, মেফিড্রিন, স্পাইস, এক্সটাসির মতো নতুন নতুন মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নতুন নেশাজাতীয় দ্রব্যগুলোকে মাদকের পর্যায়ে তালিকাভুক্ত না করায় সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় মাদকের তালিকা হালনাগাদ করা জরুরি।
মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পাল্টায়। নানা নামে, নানা চেহারায়, নানা কৌশলে তারা মাদক ব্যবসা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট থাকে। তাদের সংঘবদ্ধ চক্র, তাদের কৌশল এবং নিত্যনতুন মাদক সম্পর্কে তথ্য ও কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে সদা সতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে। মাদকের জোগান ও ব্যবহার রোধ করাই মাদকসংক্রান্ত অপরাধ নির্মূলের পথ।

No comments

Powered by Blogger.