সময়ের প্রতিবিম্ব-কার অছিলায় সিন্নি খাইলা মুন্সি চিনলা না by এবিএম মূসা

আমি একজন নির্বাচিত সাংসদ ছিলাম। তার আগে-পরে আমার একান্ত পরিচয়, আমি একজন দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিক। শুধু স্বাধীনতার অব্যবহিতপর সাংবাদিকজগৎ থেকে কিছুদিনের জন্য ছিটকে পড়লাম। বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল।


বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু সাংবাদিকতার পরিমণ্ডলের বাইরে রাজনীতিতে পুরোপুরি প্রবেশের ইচ্ছা বা খায়েশ আমার ছিল না। প্রথমত, রাজনীতি করে পেট ভরবে না, ভরানোর অন্ধিসন্ধিও জানা ছিল না; দ্বিতীয়ত, আমি জানতাম, রাজনীতি সার্বক্ষণিক জনসেবামূলক একটি ব্রত, যা পালন করা আমার ধাতে সইবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমার এ দুই আপত্তি অগ্রাহ্য করলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, সদ্যস্বাধীন দেশের সংসদে তাঁর ভাষায় জ্ঞানী-গুণী, আইনবিদ-শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক-সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দেখতে চান।
বাংলাদেশের প্রথম সাংসদ হওয়ার গৌরব পেলাম, হারালাম দীর্ঘদিনের সাংবাদিক পরিচয়। বিভিন্ন বিদেশি সংবাদমাধ্যম যথা বিবিসি, লন্ডন টাইমস, সানডে টাইমস, ইকোনমিস্ট, নিউইর্য়ক টাইমস-এর প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হলাম। এসব মাধ্যম থেকে সেই সময়ের হিসাবে বিরাট অঙ্কের মাসিক তিন-চার হাজার টাকা আয় বন্ধ হয়ে গেল। সাংসদের মাসিক বেতন এক হাজার টাকা, সংসদ চলাকালীন দৈনিক ভাতা ৫০ টাকা। এই টাকায় সংসারই চলে না, অথচ এলাকার কর্মীদের নানা চাহিদা মেটাতে হতো। সদ্যস্বাধীন রিক্ত দেশে ভিন্ন পথে আয়ের এত পথও ছিল না। ছিল না ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাট, বালুমহালের ইজারা, চাঁদাবাজির বখরা, কাবিখার চাল-গমের খাবি খা থেকে বখরা। উল্টো এলাকার লোকজনের, বিশেষ করে দলীয় কর্মীদের কর্মসংস্থানের আবদার মেটানো, থানায় জামিনের সুপারিশ, এমনকি বউ-তালাকের সালিস করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।
এমন অবস্থায় ভাবছিলাম, ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’। অগত্যা বঙ্গবন্ধুকে বললাম, ‘রাজনীতি আমার ধাতে সইবে না, মুক্তি দিন। লন্ডনের সানডে টাইমস-এর সম্পাদক হ্যারি ইভান্স আমাকে তাঁর পত্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গবেষণা সেলে একটি অস্থায়ী চাকরি দিয়েছেন। আমি সেই চাকরি নিয়ে চলে যেতে চাই।’ আবেদনটি সর্বশেষ করেছিলাম ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় গণভবনের মাঠে পায়চারিরত বঙ্গবন্ধুর কাছে। সঙ্গে ছিলেন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ও বরিশালের সাংসদ ন্যাপ মহীউদ্দিন। বঙ্গবন্ধু বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘যাবি, সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?’ তাঁর বিষণ্নতার কারণটি এর আগে একটি প্রতিবেদনে বর্ণনা করেছি, তাই পুনরুল্লেখ করলাম না। তবে এটুকু বলতে পারি, কিছুদিন আগে চিলির আলেন্দের হত্যাকাণ্ড তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল।
এতক্ষণ এত কথা বললাম, শুধু এটুকু বোঝানোর জন্য যে একসময় সাংসদ হওয়ার আকর্ষণ একমাত্র জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদদেরই ছিল। আমরা কয়েকজন ছিলাম ‘অনুপ্রবেশকারী’। রাজনীতির আকর্ষণ ছিল নিঃস্বার্থ আর ছিল জনসম্পৃক্ততা, জনসেবার মহান ব্রত। অসীম ক্ষমতাধর হওয়ার অথবা অর্থ লালসা চরিতার্থ করার, ব্যবসায়িক স্বার্থ, ক্ষমতার দাপট দেখানোর আকাঙ্ক্ষা তাঁদের ছিল না। জেলার ও তৎকালীন মহকুমার শাসনভার ন্যস্ত ছিল জাঁদরেল সাবেক সিএসপি আমলাদের ওপর। সাংসদেরা তাঁদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নাক গলাতেন না। কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী প্রশাসনের ধারে-কাছে যেতেন না। সীমিত বিদেশি সাহায্যে কয়েক বান্ডিল টিন আর দু-চার মণ গম মার্কিন পিএল-৪৮০ খয়রাত বাবদ সাংসদেরা মাঝেমধ্যে পেতেন। সেগুলো বিলির দায়িত্ব দিয়ে দিতেন থানার সিও (ডেভ) ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তাকে। এলাকায় হেঁটে বেড়াতে হতো খেতের আইলে অথবা চাষা-ভূষাদের বাড়ির উঠোনের ওপর দিয়ে। দু-একজনের সাইকেল ছিল। সেসব পথে চালানোর জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি ব্যবহার কল্পনাও করা যেত না। মাঝেমধ্যে ঢাকা এলে থাকতে হতো ফকিরাপুলের সস্তার হোটেলে। তিনটি সদস্য-ভবনে ৩০০ জনের শ দুয়েকের স্থানসংকুলান হতো, তাও আবার ‘ডাবলিং’ করে।
উপরিউক্ত পটভূমিতে বর্তমান সাংসদের ক্ষমতা ও দাপট যে শত-সহস্র গুণ বেশি, সেসব বিবরণ প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে। সেই দাপট আর হম্বিতম্বি, ক্ষমতার আস্ফাালনের খবরাখবর পত্রিকায় ছাপা হওয়ার কারণে তাঁরা কেন জানি গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। জাতীয় সংসদে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বেশ কয়েকজন মাননীয় সদস্য। শুধু সাংবাদিক আর গণমাধ্যমকে যথেচ্ছ ভাষা ব্যবহার করে তুলোধুনো করেননি, একজন সম্পাদককে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ করে একটি সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিলেন বলে নির্দ্বিধায় অভিযুক্ত করলেন। অবশ্য এ অভিযোগটি তিনি অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনায় না এনেই করতে পেরেছেন কারণ, সংসদ ভবনে সম্মানিত সদস্যের যেকোনো বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়মুক্তি আছে।
আমাদের মাননীয় সাংসদদের চার-পাঁচজন অভিযোগ করেছেন, গণমাধ্যম নাকি ১/১১-এর অর্থাৎ অগণতান্ত্রিক শাসনের আগমন ঘটিয়েছিল। এই ১/১১ সম্পর্কে সে সময়ে নানা তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আবার এ সত্যটিও বর্তমানের মাননীয় সাংসদদের স্মরণে আনতে চাই, ১/১১ সংঘটিত হওয়ার কারণে ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন হতে পারেনি। যদি সেই পাতানো নির্বাচন রুখে দেওয়া না যেত, তবে তাঁদের অনেকেই আজ সংসদে এসে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার অবাধ সুযোগ পেতেন না। যেখানে নিরুদ্দেশে গিয়েছিলেন, সেখানেই থাকতে হতো। এও তাঁরা ভুলে গেছেন, তাঁর নেত্রীও ১/১১কে স্বাগত জানিয়েছিলেন, এমনকি কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন। আবার ১/১১-এর সুযোগে আকস্মিকভাবে ক্ষমতা হাতে পেয়ে জগদ্দল পাথরের মতো যাঁরা রাষ্ট্র ও সরকারের ঘাড়ে ছেপে বসেছিলেন, পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমের সাহসী ভূমিকার কারণেই তাঁরা বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সর্বজনমান্য নেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর ভাষায় বলব, এখন যাঁরা সংসদে বাঘের গর্জন করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই তখন ‘ইঁদুর’ হয়ে গর্তে ঢুকেছিলেন অথবা অজ্ঞাতবাসে গিয়েছিলেন। সে সময় যখন জনগণ রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত, মানবাধিকার যখন লুণ্ঠিত, রাজনীতিবিদেরা নির্যাতিত, তখন সাহসী ভূমিকায় ছিলেন সাংবাদিকেরা। গণমাধ্যমের সেই ঝুঁকিপূর্ণ সাহসী ভূমিকার কারণে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকে আজ সংসদে সাংবাদিক-সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বাঘ হয়ে হুঙ্কার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তো আমার নোয়াখালীর ভাষায় বলছি, ‘কার অছিলায় সিন্নি খাইলা মুন্সি চিনলা না।’
আরও জিজ্ঞাস্য আছে ক্ষিপ্ত ও ক্ষুব্ধ কতিপয় সাংসদকে। মাইনাস টু ফর্মুলা নস্যাৎ করার জন্য বর্তমানে গর্জে ওঠা মাননীয় সাংসদেরা তখন কোনো ভূমিকা নিয়েছিলেন কি? সেদিনের বিদেশে হিজরত করা অথবা নিরুদ্দেশে যাওয়া রাজনীতিবিদেরা ‘মানি না-মানি না’ বলে রাজপথে নামেননি কেন? প্রসঙ্গত স্বীকার করছি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য, ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে সাজানো ছক অনুসরণে নির্বাচনী প্রহসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে গৃহীত ১/১১ পদক্ষেপ আমরা, গণমাধ্যমের অনেকে সমর্থন করেছি। আমরাই আবার ‘রেলগাড়ি ট্রাকে বসানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাঁরা নিজেরাই চালকের আসনে বসতে নানা অপকৌশল প্রয়োগ করছিলেন, তখন তাঁদের ট্র্যাকচ্যুত করতে জনমত সৃষ্টি করেছি। সেদিন আমার মতো অনেক সাংবাদিক এবং ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমই ব্যাপক বিরূপ পরিস্থিতিতে নানা ঝুঁকি নিয়ে তথাকথিত ‘সংস্কার’ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছিল। মাইনাস টু ফর্মুলা ব্যর্থ করতে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে তাগাদা দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মাটি আঁকড়ে দেশের মাটিতে পড়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এর বিপরীতে ১/১১ কুশীলবদের সঙ্গে কতিপয় ক্ষমতালিপ্সু সুবিধাবাদী ‘রাজনীতিবিদ’ ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান আর বারিধারায় বৈঠক করেছেন। বর্তমান সাংসদ-মন্ত্রীদের অনেকেই সেদিন কারণে-অকারণে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, গণমাধ্যম সেই নির্যাতনের বিবরণ দেশে-বিদেশে প্রচার করেছে। মতিয়া-সাহারা দিনের পর দিন নেত্রীর অভ্যন্তরীণ স্থানের কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে জড়ো হয়ে তাঁদের অন্তর্বেদনার অভিব্যক্তি ঘটিয়েছেন, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগণ জেনেছে। ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আর রফিক আহমদ সাহসী আইনি লড়াই করে গেছেন। সেই লড়াইয়ের বিবরণ জনসমক্ষে প্রচার করেছেন সংবাদপত্র আর বেসরকারি টেলিভিশনের কর্মীরা। টক-শো আর সম্পাদকীয় পাতায় কলাম লিখে ১/১১ প্রাপ্ত ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগণের ক্ষমতা ফিরে পেতে গণমাধ্যম জনমত সৃষ্টি করেছে। এ জন্য অনেক সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু মাথা নোয়াননি। আজকের গণমাধ্যমকে হুঙ্কারদাতাদের ভূমিকা তখন কী ছিল, তা তো গণমাধ্যম এখনো পুরোপুরি ফাঁস করেনি।
এখন ভাবি, এত যে লেখালেখি করলাম, ১/১১ কুশীলবদের কবল থেকে গণতন্ত্র মুক্ত করে কাদের হাতে তুলে দিলাম! উপরিউক্ত প্রশ্নের জবাব বা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। তবে অবাক হয়ে ভাবছি, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে কতিপয় রাজনীতিবিদ বারবার স্বৈরতন্ত্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ক্ষমতার লোভে তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের কেউ যখন প্রতিবাদী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন, তখন দুঃখ পাই বইকি! কী আশ্চর্য, টাঙ্গাইলের একজন সাংসদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষায় আপত্তিকর বক্তব্য দিলেন। তিনি কি ভুলে গেছেন, আমাদের উচ্চতম আদালত কর্তৃক সংবিধানবিরোধী ঘোষিত সপ্তম সংশোধনী সংসদে হালাল করার জন্য কার স্ত্রী সংসদে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছিলেন? সেই ‘হ্যাঁ’ ভোটটি না পেলে সমরনায়ক জেনারেল এরশাদ দীর্ঘদিন রাজত্ব করার অজুহাত পেতেন না। আমাদেরও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে হতো না।
বড় কড়া হয়ে যাচ্ছে আজকের প্রতিবেদনটি। এ জন্য পাঠকদের কাছে ক্ষমা চাই। সত্যিকার নিঃস্বার্থপর জনপ্রতিনিধি ও সাংসদদের সমীপে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, গণমাধ্যম এ দেশে বারবার হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণকে সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে, সব সময় মাঠে নামিয়েছে। ক্ষমতাধরের ভ্রূকুটি উপেক্ষণকারী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারি দলের গাত্রদাহের মূল কারণটি হচ্ছে, বিরোধী দল সংসদে যা বলতে পারত, তা বলতে সেখানে নানা বাহানায় না যাওয়ায় গণমাধ্যম সে কাজটি করছে। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার গতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না, বিদ্যুৎ-গ্যাস নিয়ে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে কেউ ‘মুলতবি প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন না। খুনের দায়ে সন্দেহভুক্ত সংসদের আচরণ, পাবনায় ভেঙে পড়া প্রশাসন নিয়ে সংসদে কথা বলার কেউ নেই। সাংসদদের কর্তব্যের এই খামতি মেটাতে গিয়েই গণমাধ্যম তাঁদের কারও-কারও রোষানলে পড়েছে। এমনকি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ‘সংসদে’ তলব করার প্রস্তাবও করেছেন কয়েকজন ক্ষুব্ধ মাননীয় সদস্য। আমি তাঁদের ঢালাও গালমন্দ আর উষ্মা লাঘবে এ প্রস্তাবটিকে পুরোপুরি সমর্থন জানাই। তবে শর্ত হচ্ছে, সাংসদেরা ও সাংবাদিক প্রতিনিধিদের অভিযোগ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা লুই কানের দালানের কোনো গোপন কক্ষে হবে না। সবই প্রকাশ্যে আলোচিত হতে হবে, সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে, যার মূল্যায়ন করবেন সংসদের এলাকার জনগণ।
সর্বশেষ মাননীয় সাংসদদের বিনীতভাবে একটি আগাম আশ্বাসবাণী শোনাতে চাই। তাঁদের কর্মকাণ্ডের কারণেই ১/১১ অথবা প্রত্যক্ষ স্বৈরাচারী শাসনের আগমন ঘটে। তাঁদের সৃষ্ট দেশের বর্তমান বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে যদি আবার তাঁরা সংকটে পড়েন, সেদিন গণমাধ্যম ও ন্যায়নিষ্ঠ আইনজীবী শফিক-রফিকেরাই তাঁদের পক্ষে গণতন্ত্রের স্বার্থে কলমযুদ্ধ করবেন। গণতন্ত্রের সংকটে গণমাধ্যমই রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে দেশে জনগণের শাসন কায়েমের জন্য চিরদিন বলেছেন আর লিখেছেন এবং এ কারণে লিখে যাবেন, নির্যাতিত হয়েছেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ত্রাণসামগ্রী চুরি, মাস্তানি, দলবাজি, ডিসি-এসপি পেটানোর কারণে আবার যদি গণতন্ত্র সংকটাপন্ন হয়, গণমাধ্যমই তখন দেশ ও জাতিকে এবং রাজনীতিজীবিদের মুশকিল আসানের পথ বাতলাবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.