চরাচর-জয় হোক ভালোবাসার by তামান্না ইসলাম অলি

'ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনের মন্দিরে'- এ রকম হাজারো ভালোবাসার কথা আজ বাজছে প্রতিটি প্রেমিক হৃদয়ে। সবাই আজ তার প্রিয়জনকে বলবে ভালোবাসার কথা। বলবে 'ভালোবাসি তোমায়'। দেবে নানা উপহার। সারাটা দিন কাটবে ভালোবাসার মানুষটিকে ঘিরে। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি।


বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ প্রথম জুলিয়াস এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। আর আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইন এসেছে নব্বইয়ের দশকে। এর নির্দিষ্ট ইতিহাস এখনো অজানা। তবে একে ঘিরে প্রচলিত আছে নানা গল্প। এর প্রতিটি গল্পেরই নায়ক একজন। নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। যাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনী হলো এক রোমান খ্রিস্টান পারদির গল্প। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। সে সময় তারা দেব-দেবীর পূজা করতেন। খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন চিকিৎসক। ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারকও। সম্রাটের আদেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি দেবী পূজা করতেন না, যে কারণে তাঁকে কারাবন্দি করা হয়। কারাগারে থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে চিরকুট, ফুল ও উপহার দিত। কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসত। একসময় তাঁর চিকিৎসায় মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। এরই একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ভালো লাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভ্যালেন্টাইন তাঁর লেখা শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন 'ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন'। আর এ অপরাধেই মৃত্যুদণ্ড হয় তাঁর। এখান থেকেই ভ্যালেন্টাইনস ডের শুরু বলে অনেকেই মনে করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এ কারণে তাঁর নামেই দিনটির নামকরণ করা হয়েছে।
অন্য আরেকটি কাহিনীও শোনা যায় দিনটিকে ঘিরে। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ছিলেন ক্লাতিয়াস। হঠাৎ করেই তাঁর সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কারণ রাষ্ট্রের সৈনিক হিসেবে কেউই যোগ দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। আর সম্রাট মনে করছিলেন, বৈবাহিক জীবনের আকর্ষণের কারণেই তাঁদের এ অনীহা। যে কারণে তিনি বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে তাঁর এ ঘোষণা মেনে নিতে পারেননি তরুণ-তরুণীরা। তাঁদেরই একজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিয়ে করেন সেন্ট মারিয়াস নামের এক তরুণীকে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন পেশায় একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তাই অন্যদের বিয়ের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা তিনিই সম্পন্ন করতেন গোপনে। এ খবর যায় রাজার কানে। গ্রেপ্তারের নির্দেশ আসে।
আরো একটি গল্প আছে রোমান সভ্যতায়। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস ভ্যালেন্টাইন অনুষ্ঠানের দিনটি নির্ধারণ করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর দিনটির নামকরণ করেন ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে।
দিনবদলের সঙ্গে ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে হয়তো পারিবর্তন হয়েছে। আধুনিক যুগে মানব-মানবীর প্রেম এগিয়েছে প্রযুক্তির হাত ধরে। মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের কল্যাণে ভালোবাসা পেয়েছে নতুন মাত্রা। তার পরও ভালোবাসা সর্বজনীন। সব যুগে সবকালে নারীর প্রতি পুরুষ বা পুরুষের প্রতি নারীর তীব্র আকর্ষণ ছিলই। আর এ আকর্ষণের জন্যই সেন্ট ভ্যালেন্টানের মতো বহু মানুষ প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন। তবু মানুষের ভালোবাসা হয়ে আছে অমর অক্ষয়। তাই ভালোবাসার সম্মানে বছরের একটি দিন প্রতীক হিসেবে উদ্যাপন করে মানুষ। যেন তাদের প্রতিটি দিন হয়ে ওঠে প্রেমময়।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.