কোচিং ব্যবসা বন্ধের দাবি-শ্রেণীকক্ষেই শিক্ষা সম্পন্ন করা হোক

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা অভিভাবকসহ সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছে ছাত্রীর নিরাপত্তা বিঘি্নত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রকাশ্যে। ঢাকার বিখ্যাত একটি স্কুলে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সচিবালয়ে। শিক্ষকরা সেখানে খোলামেলা মত প্রদানকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেন।
নিরাপত্তার বিষয় ছাড়াও শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে সেখানে আলোচনাকালে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শিক্ষাদান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই সত্যটি সভায় উপস্থিত প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা জানেন। তাঁরা জানেন, পাঠ্যসূচি আর শিক্ষাকাল সামঞ্জস্যবিহীন। নানা কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শিক্ষাদান করা যায় না। সাধারণত সপ্তাহে এক দিন হিসেবে বছরে ৫২ দিন, এর সঙ্গে যোগ হয় কমপক্ষে আরো ৮৫ দিনের ছুটি। যেসব স্কুলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র আছে, সেখানে ছুটি যোগ হয় আরো ৬৫ দিন। তার মানে অনেক স্কুলে বছরে মাত্র পাঁচ মাসের মতো ক্লাস হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ১২ মাসের মধ্যে যদি সাত মাসই স্কুলে ক্লাস না হয়, তাহলে সেই শিক্ষার্থী পাঠ শেষ করবে কিভাবে? ক্লাস না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থী যখন তার পাঠ শেষ করতে পারে না, তখন বাধ্য হয় ক্লাসের বাইরে পাঠ গ্রহণের সুযোগ খুঁজতে। এক শ্রেণীর শিক্ষকও যেন সেই অপেক্ষায়ই থাকেন। তাঁরা ক্লাসের চেয়ে তাঁদের পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষাদানের বিষয়ে বেশি তৎপর হন। এই কর্মকাণ্ড একপর্যায়ে লোভের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এমন অভিযোগও পাওয়া যায়, শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন না করে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীকে যেতে বাধ্য করেন।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষণকাল বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে রমজানের জন্য নির্ধারিত এক মাসের বেশি ছুটি কমিয়ে সপ্তাহকাল করা যেতে পারে। একই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটিও কমিয়ে আনতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীতে পাঠ গ্রহণের সুযোগ বেশি পাবে। রাজনৈতিক কারণে যেসব পরীক্ষাকেন্দ্র করা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করে মূল কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্র আছে এমন স্কুলগুলোতে পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুলেই যদি কারিকুলাম সম্পন্নের ব্যবস্থা করা হয় তাহলেই শুধু কোচিং ব্যবসা বন্ধ হতে পারে। আর এ কাজটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর ওপর। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী জনমত গঠনের পাশাপাশি ছুটি কমিয়ে এনে ক্লাসে পড়া শেষ করে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই কোচিংমুখী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।


No comments

Powered by Blogger.