কে ফিরিয়ে দেবে ৩৮টি শিক্ষাদিবস!-ক্ষমতার তালা

কদিন পরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। কিন্তু বিদ্যালয়ে তালা, বারান্দায় শতরঞ্জি পেতে দাপ্তরিক কাজ সারছেন শিক্ষকেরা। যে ছাত্রটি জিপিএ-৫ পাওয়ার আত্মবিশ্বাসী ছিল, এখন সে ভীত—পাস করবে কি না! প্রধান শিক্ষক নিজের অক্ষমতায় লজ্জিত ও মর্মাহত। কিন্তু তালার এমনই ক্ষমতা, ৩৮ দিন ধরে তা স্পর্শ করার সাহস করেনি কেউ! কেননা, এই তালা ক্ষমতার, এই তালা সাংসদের গোস্যার। এই তালা ভাঙে সাধ্য কার?


দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক এবং কয়েক শ অভিভাবককে উপহাস করে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাকসপোল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলছে। প্রশাসন সহায়তা করেনি, থানার ওসি পরামর্শ দিয়ে খালাস, শিক্ষা বোর্ড উদাসীন, এমপি সাহেব ‘স্থানীয়ভাবে সমস্যা মিটিয়ে নিতে’ বলেন। কিন্তু কিছুই মেটেনি।
অবশেষে, প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে প্রকাশিত হলো এই তালার বিক্রমের কাহিনি। তালার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় সাংসদের নাম। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে স্থানীয় সাংসদ টিপু সুলতানের সমর্থক প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি। তাই তাঁর লোকজন ৩৮ দিন ধরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদিবস এই জবরদস্তিতে নষ্ট হলো। বার্ষিক পরীক্ষার আগে এটা যে কত বড় ক্ষতি, তা পরিমাপের দায়িত্ব কি কেবল ওই সব শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের?
সাংসদের গোস্যা পাহাড়সমান। প্রথম আলো প্রতিনিধিকে তিনি বলেছেন, ‘আপনি আপনার কাজ করুন, আমাকে আমার কাজ করতে দিন।’ সাংসদের কাজ কি বিদ্যালয় বন্ধ করা? ক্ষমতার তেজস্ক্রিয়ায় শিশুরাও ভুগবে, কেউ বাধা দিতে পারবে না—এটা কেমন বাস্তবতা? প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে সেই তালা খোলার উদ্যোগ দেখা গেল। কিন্তু কে ফিরিয়ে দেবে মূল্যবান শিক্ষাদিবসগুলো? ক্ষমতার এই দাপটের শাস্তি কি হবে না? ক্ষমতাসীন দলের যেসব সাংসদ এলাকায় ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি গ্রহণ করছেন, তাঁদের ওপর কি আইনের জোর প্রযোজ্য হবে না?

No comments

Powered by Blogger.