৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপ প্রয়োজন-সিপিডির সংলাপ

সংবিধান অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাকি দুই বছরের কিছু বেশি। অথচ নির্বাচনী আইন ও রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়টি যে তিমিরে ছিল, সেখানেই আছে। বড় কোনো দলেই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র অনুশীলনের আওয়াজ মিলছে না।


কার্যকর অর্থে অসহায় ভোটাররা দুই বড় দলের প্রার্থীদের মধ্য থেকেই ‘জনপ্রতিনিধি’ পাঠাবেন সংসদে। আর সেই সংসদের বিরোধীদলীয় সদস্যরাও সংসদ বর্জন করবেন। আমরা রাজনীতির এই গোলকধাঁধায় খাবি খাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন দল নিবন্ধনব্যবস্থা চালু করে নিশ্চয়ই বিরাট একটা কাঠামোগত অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতায় প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যায়নি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে সেই চিত্রই ফুটে উঠেছে। জাতীয় সংসদ নিষ্ক্রিয় এখন উভয় অর্থে। শুধু যে বিরোধী দল বর্জন করে একে ন্যুব্জ রাখছে তা-ই নয়, সরকারি দলও যে এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ও অর্থপূর্ণ করতে সচেষ্ট, তার প্রমাণ নেই।
নির্বাহী বিভাগের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সরকারি দলবেষ্টিত জাতীয় সংসদের কোনো মতভিন্নতা সেভাবে দেশবাসীর নজরে আসে না। বাজেট কিংবা আইনের খসড়া, যেটাই যখন নির্বাহী বিভাগ থেকে শেরেবাংলা নগরে প্রস্তাব করা হয়, সেটা তেমন কোনো বাধা ছাড়াই পাস হয়ে যায়। প্রথম সংসদে ব্যবসায়ীরা ছিলেন ২৪ শতাংশ, এখন ৫৬ শতাংশ। মন্ত্রিসভার সদস্য বাছাইয়েও ব্যবসায়ীরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারের নীতিনির্ধারণী সব পর্যায়ে জেঁকে বসায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় তাঁরা প্রভাব ফেলতে পারছেন।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব একটি বিরাট মাপকাঠি। পঞ্চম থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মাত্র ২৪ জন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া প্রমাণ করে, দলগুলো গণতন্ত্রের শর্ত পূরণ করছে না। সরকারি দলের এক নেতা সংলাপে দেশের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকাকে গণতন্ত্রের সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে সরকারি দল আগের ধারাই নীরবে টিকিয়ে রেখেছে। কারও বিরাগভাজন হতে ঝুঁকি নেয়নি। এ রকম যা কিছু তেতো অথচ গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য অপরিহার্য, সে বিষয়ে দুই বড় দলের সাংসদেরা নানা মাত্রায় উদাসীন। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই কাজের সময়ে মুখ বন্ধ রাখাকেই নিরাপদ মনে করেন। কারণ, মনোনয়ন লাভটাই হয় ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ-অপছন্দে। এটা চলমান অপরাজনীতির একটা দুর্ভেদ্য শিকল। একে ভাঙতে হলে মনোনয়ন-প্রক্রিয়াও সর্বাংশে গণতান্ত্রিক হতে হবে।
সিপিডির সংলাপে তথ্য এসেছে, ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে কমছে। এর মূলে রয়েছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নির্বাচনী জোট বাঁধার রাজনীতি। আমাদের ভাবা উচিত, ৭০ অনুচ্ছেদে দলবদল নিষিদ্ধের যে নীতি আমরা সংসদ পরিচালনায় ব্যবহার করি, সেটা কেন তাহলে সংসদ গঠনকালে প্রযোজ্য হবে না। দলীয় প্রতীকে সিল মারার সহজ যে ভোটব্যবস্থা চালু আছে, তার বিকল্প ভাবারও সময় এসেছে। সংসদে আমরা নিবন্ধিত ছোট দলগুলোরও কণ্ঠস্বর শুনতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.