চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত by আবদুল মান্নান

আমি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রতিনিধি হিসেবে সিন্ডিকেট সদস্য। আমরা গত ৯ ফেব্রুয়ারি জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য। সেখানে আগের দিন ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি প্রতিবেদন প্রক্টর পেশ করেন। তা নিয়ে আমরা সবাই দীর্ঘ আলোচনা করেছি।


ওই সিন্ডিকেটে আমি এবং সিনেট প্রতিনিধি এস এম ফজলুল হক ছাড়া বাকি সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সদস্য এবং ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এমনকি উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ ঘটনার দিন ঘটনা বেশি দূর গড়ানোর আগে মারমুখী সশস্ত্র ছাত্রশিবিরের মিছিলের সামনে গিয়ে নিজে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তারা উপাচার্যের কোনো কথা কিংবা অনুরোধ না শুনে কলা অনুষদের ভেতরে প্রবেশ করে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে পা বাড়ায়। যদিও বলা হচ্ছে, ছোট্ট ঘটনা থেকে এর সূত্রপাত; কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। যে ছোট্ট ঘটনাটির কথা বলা হচ্ছে, তা ঘটেছিল কলা অনুষদে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে। দুজন সহপাঠীর মধ্যে কথাকাটাকাটি দিয়েই এর সূত্রপাত। এর অল্প কিছু পরেই ছাত্রশিবিরের একটি জঙ্গি মিছিল বের হয়। তারপর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত শুরুর বিষয়টি প্রমাণ করে- পুরোটাই পূর্বপরিকল্পনা; তা না হলে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব হতো না। গত তিন বছরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো সংঘাত হয়নি। কোনো কোনো সময় ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও নিয়েছে। ছাত্রদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে, কিন্তু দুটি সংগঠনের মধ্যে এ রকম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়নি। বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সাত মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা যথাসময়ে নির্বিঘ্নে হয়েছে, অন্যান্য কর্মকাণ্ডও সুষ্ঠুভাবে চলেছে। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারি যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটল, এর ফলে এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল সব সময় সক্রিয় ছিল, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ওই দিন। সুতরাং এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঘটতে পারে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম যত সামনের দিকে যাবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকার এবং প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চলবে এবং তা পরিকল্পিতভাবে একটি মহল চালাতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে, সেই ফাঁড়ির ৪০ জন পুলিশ সদস্য প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে কর্তব্যরত থাকেন; কিন্তু ঘটনার দিন প্রাথমিকভাবে পুলিশের এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে সংগতই যথেষ্ট সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ যদি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিত তাহলে ঘটনা এত দূর নাও যেতে পারত। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করি, তদন্ত শেষ হলে সার্বিক রহস্য উন্মোচিত হবে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে কিংবা আর যাতে কেউ অপপ্রয়াস চালাতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.