কেন এ নৃশংসতা?-আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না

শবেবরাতের রাতে রাজধানীর উপকণ্ঠে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো রহস্য রয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, গণপিটুনির শিকার হয়ে ছয় ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ছাত্ররা নির্দোষ। অন্যদিকে ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী পিটিয়েছে, এমন কথা স্বীকার করলেও কারা ছাত্রদের পিটিয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। ওদিকে নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে মাতম।


আশা করা হচ্ছে, রহস্যের জট শিগগিরই খুলে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমিনবাজারের গণপিটুনির ঘটনার তদন্ত হবে।
ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আপাতত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে নিহতরা সবাই ছাত্র। ঘটনায় আহত এক ছাত্র এখন পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন। তার দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, শবেবরাতের রাতে সবাই সেখানে যায় নেশাদ্রব্য সেবনের জন্য। এলাকাটিও মাদক জোন হিসেবেই পরিচিত। একই সঙ্গে এলাকায় ডাকাতির ঘটনাও ঘটে থাকে। যেখানে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেটিকে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবেই ধরা হয়। কিছুদিন আগেও সেখানে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি হয়েছে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। স্বভাবতই অপরিচিত বহিরাগতদের আগমনে এলাকাবাসীর মনে ডাকাতির সন্দেহ দেখা দেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কেন? আইন নিজের হাতে তুলে নিতে গিয়ে অকালে ঝরে গেল ছয়টি প্রাণ।
আমিনবাজারের এই ঘটনা কয়েকটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রথমত, এলাকাটি যে অপরাধপ্রবণ, সেটা পুলিশের ভাষ্য থেকেও স্পষ্ট। অন্যদিকে ওই এলাকায় মাদকদ্রব্যও সহজলভ্য বলে মনে হয়। যে কারণেই ছাত্ররা সেখানে যাওয়াটা নিরাপদ বলে মনে করেছিল। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা কি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এতটাই ঢিলেঢালা যে এলাকার মানুষকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হয়? অন্যদিকে ছাত্ররা আজকাল নেশার প্রতি কি পরিমাণ ঝুঁকে পড়েছে যে, ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে পবিত্র শবেবরাতের রাতেও নেশাদ্রব্য সেবনের জন্য তাদের যেতে হয়েছিল আমিনবাজারের মাদক জোনে!
আমিনবাজারে গণপিটুনিতে ছয় ছাত্রের মৃত্যুর পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পুলিশ সেটাকে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ডাকাতির আলামত উদ্ধারের গল্পও বলা হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে। শুরুতে নিহতদের ডাকাত হিসেবেই পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজনের বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডাকাতি করা নিহতদের উদ্দেশ্য ছিল না। নেশা করার জন্যই তাদের ওই এলাকায় যাওয়া। কিন্তু পুলিশ শুরুতেই কেন ডাকাত হিসেবে ছয় ছাত্রের পরিচয় দিতে গেল? এলাকার মানুষ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পেছনের কারণটিও হয়তো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই। এটাও হতে পারে যে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো ভূমিকাই নেই। সে কারণেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হতে হয়েছিল এলাকাবাসীকে। কিন্তু আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ যে ডাকাতির আলামত দেখিয়েছে, সে আলামত কোথা থেকে এল, সেটাও এখন একটা বড় প্রশ্ন।
একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমিনবাজারে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে গিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ছয় ছাত্রের প্রাণ। নেশার ব্যাপারটি সত্য হলে, এই ছয় ছাত্রকে তাদের পরিবার সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারেনি বলেই এভাবে তারা নেশার জগতে পা রাখতে গেছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতরা নিজেদের কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে এলাকার মানুষকে হয়তো আইন হাতে তুলে নিতে হতো না। বিষয়টি সবাইকেই ভেবে দেখতে হবে। এভাবে ছয়টি জীবন ঝরে যেতে পারে না। এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।


No comments

Powered by Blogger.