যোগেন্দ্র বালি-জিহাদি হামলা বন্ধ হবে কবে

পাকিস্তানে জিহাদি উৎপাত বন্ধ করতে কারো কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও। তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযানের ব্যাপারে মাঝেমধ্যে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুুদ্ধের প্রশ্নে তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, অ্যাবোটাবাদে আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার পর সে বিভক্তি যেন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।


পাকিস্তানের খ্যাতিমান সাংবাদিক খালেদ আহমেদ একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ লিখেছেন, যার নাম 'ওসামার পর, যুদ্ধ না শান্তি?' তিনি খুব বিশদভাবে ওসামা-পরবর্তী সময়ের মিলিটারি-পলিটিক্যাল পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, জাতি আমেরিকাকে ঘৃণা করে, সেনাবাহিনীর রয়েছে ভারত রোগ এবং রাজনীতিবিদরা নতুন করে আমেরিকাবিরোধী বাতাসে পাল তুলেছেন। এটা পরিষ্কার যে কিছু আইএসআই কর্মকর্তার নাম ওঠার এবং তাঁদের চাকরিচ্যুত করার পরও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভক্তি আরো বেড়ে গেছে ওসামার মৃত্যুর পর। এই সেনা কর্মকর্তারা ওসামাপন্থী এবং আমেরিকাবিরোধী ছিলেন। খালেদ আহমেদের মতে, আমেরিকানরা ওসামাকে হত্যা করেছে এমন একটি জায়গায়, যেখানে পাকিস্তান সীমান্ত বাহিনীর প্রধান দপ্তর। আর রয়েছে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী, যেখানে পাকিস্তানের প্রকৃত শাসক উৎপাদন হয়।
অ্যাবোটাবাদের জনগণ আশা করে আছে, নতুন হাজারা প্রদেশের রাজধানী হবে অ্যাবোটাবাদ। এ শহরের পরই রয়েছে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী তৈরির মাইলস্টোন, মানসেহরা ট্রেনিং ক্যাম্প। এটা নিশ্চিত যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শাসকরা মানসেহরার মতো ঘাঁটি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন, তা হতে পারে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জোরের সঙ্গে দাবি করেছে যে তারা ওসামা বিন লাদেনের অবস্থানের কথা জানত না। কিন্তু সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বিধাবিভক্তিই বিন লাদেন বিষয়ে জানা ও না-জানাদের পার্থক্য ভাগ করে দিয়েছে।
পাকিস্তানের ভাষ্যকাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, ওসামা পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীর মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বসবাস করতেন এবং শুনে থাকবেন যে জেনারেল কায়ানি আমেরিকানদের দিয়ে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছেন যে তিনি জনগণের কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। তখন কি কায়ানি জানতেন যে কেউ একজন সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় ওসামা বিন লাদেনকে রেখে দিয়েছেন? মনে হয়, অন্তত আর কেউ না হলেও যুক্তরাষ্ট্র তা জানত।
মে মাসের ২ তারিখে আমেরিকান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ওসামা বিন লাদেনের অ্যাবোটাবাদে অবস্থানের কথা তিনি আগস্ট থেকে জানতেন। কিন্তু অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্প্রতি। সিআইএ আর আইএসআইয়ের চরম শীতল সম্পর্কের মধ্য দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমেরিকা ওসামার খবর গোপন করে রাখে। অবশেষে তা ইসলামাবাদকে জানানো হয় এবং সহায়তা করতে বলা হয়। কিন্তু পররাষ্ট্র কর্মকর্তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। ফলে বিতর্ক আরো গভীর হয়ে ওঠে।
ইমতিয়াজ গুল মনে করেন, পাকিস্তানের আমেরিকা-মনোভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। আমেরিকা সম্পর্কে ধারণা পাকিস্তানের মানুষকে চরমভাবে নেতিবাচক করে রেখেছে। ইমতিয়াজ গুল মনে করেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। তিনি মনে করেন, এর পেছনে পাকিস্তানে আমেরিকার ভূমিকার গভীর ইতিহাস কাজ করেছে। তিনি পাকিস্তানের অবিশ্বাস ও ক্ষোভের কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে : ১৯৭১ সালে আমেরিকার এগিয়ে না আসা, পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্পের বিরোধিতা করা, জুলফিকার আলী ভুট্টোকে রাজনীতির ময়দান থেকে উৎখাত করার অভিযোগ, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান, ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিতর্কিত পাঁচ ঘণ্টার কম সময় ইসলামাবাদ সফর, বোমা হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানকে পাথর যুগে ফিরিয়ে নেওয়ার হুমকি এবং রেমন্ড ডেভিসের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আমেরিকার ক্ষোভ। কিন্তু এসব ঘটনার ফায়দা চলে যাচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের কাছে, যারা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অপারেশন চালাচ্ছে।
পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিয়ে লিখতে গিয়ে আলী কে চিশতি প্রশ্ন করেছেন, যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো কৌশলগত আলোচনা করে, তাহলে তারা কেন পাকিস্তানের সমাজের সর্বস্তরে বিদ্বেষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? চিশতি গ্যালপ পরিসংখ্যান দিয়ে উল্লেখ করেছেন, ৩৫ শতাংশ পাকিস্তানি মনে করে, দেশটির সন্ত্রাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। ৩৯ শতাংশ মনে করে, আমেরিকার যুদ্ধ পাকিস্তানকে করতে হচ্ছে।

আসামের দ্য সেনটিনেল পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের প্রথমাংশ। ইংরেজি থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.