৩০ কলিং রাইটারের হাতে জিম্মি সাড়ে চার হাজার বন্দি-চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেম by ফিরোজ শিবলী

ট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেমটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় কলিং রাইটারদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে কারাগারের সাড়ে ৪ হাজার বন্দি। ফলে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, জামিনে মুক্তি, আদালতে হাজিরা দিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব বন্দিকে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো মেসেজ বন্দিদের কাছে পেঁৗছাতেও বিলম্ব হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষের। চার বছর ধরে ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেমটি নষ্ট থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিলেও সংশ্লিষ্ট


ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মেরামত করার ব্যাপারে সাড়া দিচ্ছে না। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ছগির মিয়া সমকালকে জানান, হাজার হাজার বন্দির মধ্যে সাক্ষাৎ, আদালতে হাজিরা ও জামিননামা আসা বন্দিদের নাম ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেমে অফিসে বসে কারা কর্মকর্তারা ঘোষণা করলে সহজে তাদের হাজির করা যায়; কিন্তু স্থাপিত মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। ফলে কারারক্ষী ও কলিং রাইটারদের সাহায্যে বন্দিদের খুঁজে বের করে আনতে হয়। এতে অনেক সময় অপচয় হয়। কলিং রাইটারদের হাতে বন্দি হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক আরও জানান, শুধু বন্দিদের ক্ষেত্রেই নয়, কম লোকবল দিয়ে কারাগারের প্রশাসনিক কাজ চালানোও কষ্টকর। কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির আসামিরা বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে কারাগারে বন্দিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেম সচল থাকলে জরুরি মুহূর্তে ঘোষণা দিয়ে বন্দিদের শান্ত করা যেত।
ফটিকছড়ির কারা ফটকে আলবেলা খাতুন নামে এক দর্শনার্থী সমকালকে বলেন, ডাকাতি মামলায় তার স্বামী এক বছর ধরে কারাগারে আছে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সকালে এলেও বিকেল সাড়ে ৩টায় সাক্ষাৎ মেলে। শুধু আলবেলা খাতুন নন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্বজনদেরও বন্দি প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, কলিং রাইটাররা বন্দিদের কাছ থেকে সাক্ষাতের কথা বলে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্যাকুল বন্দিরাও নিরুপায় হয়ে কলিং রাইটারদের চাহিদামতো টাকা দিয়ে থাকে। ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেমটি সচল থাকলে কলিং রাইটাররা বন্দিদের জিম্মি করতে পারতেন না বলে একাধিক বন্দি সমকালকে জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ বন্দির জামিননামা আসে আদালত থেকে। কারাগারে আটক বন্দিদের স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে আসেন দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। ১২ একর জায়গার ওপর নির্মিত ছয়টি ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা এবং ডিভিশন, সেল ও মহিলা ওয়ার্ডের এসব বন্দিকে বের করে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। কারারক্ষী ও কলিং রাইটারদের স্লিপ দিয়ে বন্দিদের বের করে আনতে হয়। কারাগারে ৩০ জন কলিং রাইটার রয়েছেন। কয়েদি বন্দিদের কলিং রাইটারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব রাইটার স্লিপ নিয়ে বন্দিদের কাছ থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন বলেও কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া একাধিক বন্দি সমকালকে জানান। ফলে বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আদালতে হাজিরার জন্য পাঠানো ও জামিননামা এলে মুক্তি দিতে বিলম্ব হয়। তা ছাড়া বন্দিদের কাছে কোনো মেসেজ পাঠাতে হলে জেল সুপারকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তা পাঠাতে হয়। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি অনেক জরুরি মেসেজ পেঁৗছাতে বিলম্ব হয়।
২০০৭ সালে কারা সংস্কারের অংশ হিসেবে ডিজিটাল ট্যানয় সিস্টেমটি চট্টগ্রাম কারাগারে বসানো হয়েছিল। ছয় মাস যেতে না যেতেই এটি বিকল হয়ে পড়ে। মেরামতের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ওই প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.