চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি-নতুন কর্মসংস্থানের দিকেও নজর দিন

রকারি চাকরির বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 'দ্য পাবলিক সার্ভিস (রিটায়ারমেন্ট) অ্যাক্ট ১৯৭৪' সংশোধনের মাধ্যমে ৫৭ বছর থেকে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছরে উন্নীত করা হলো। চাকরিরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি খুশির সংবাদ। তবে সমাজের অন্য স্তরগুলোতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া মিশ্র হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে, অপেক্ষাকৃত কম


বয়সীদের পদোন্নতিতে সমস্যা হবে। নতুন নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি হলো, অনুমোদিত ১২ লাখ পদের মধ্যে এখনও ২ লাখ পদ শূন্য আছে। সরকার চাইলে ২ লাখ পদে নতুন নিয়োগ দিতে পারে। এ তথ্যটি উৎসাহব্যঞ্জক। ২ লাখ নতুন নিয়োগ দেওয়া গেলে নতুন কর্মসৃজন ও বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে তা কিছুটা হলেও দূর হবে বলে আশা করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়েছে, সে তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়েনি। ফলে দেশ এখন বিপুলসংখ্যক বেকারের ভার বহন করছে। এ অবস্থাটি কোনো সরকারের জন্যই সুখকর নয়। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলো ত্বরান্বিত হওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা কার্যকর হতে পারে না। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিন ঝুলে থাকতে হয়। এটিও কাম্য নয়। একজন মেধাবী ব্যক্তিকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তার তারুণ্যের দক্ষতা কাজে লাগানোর উদ্যোগ থাকা উচিত। যে কোনো চাকরিতে শুধু অভিজ্ঞতাই একমাত্র কার্যকর বিবেচ্য নয়। বহু কাজে তারুণ্যের উদ্দীপনা ও কর্মক্ষমতাও জরুরি। ফলে চাকরির মেয়াদকালের শুরুতে একজন তরুণ কর্মীকে যেমন কাজে লাগাতে হবে তেমনি মেয়াদ শেষে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ কর্মীর ক্ষমতাকেও কাজে লাগানোর সব উপায় কার্যকর থাকা উচিত। তরুণদের উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা সরকারের দায়িত্ব। তেমনি প্রশিক্ষিত কর্মীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ কাজ আদায় করাও দরকার। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চলি্লশোর্ধ্ব কর্মীরাই সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসতে পারেন। নীতিনির্ধারণী পদে বসার সুযোগ পান পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। নীতিনির্ধারণী পদে বসলেও নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানা বাধা এ ক্ষেত্রে কার্যকর থাকে। সরকার বদল হলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি অংশকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়। ফলে তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বড় একটি সময়ের জন্য অব্যবহৃত থেকে যায়। এটি বাঞ্ছনীয় নয়। তবে চাকরির বয়সসীমার ক্ষেত্রে ৫৯ বছর খুব বেশি বয়স নয়। রাজনীতিতে, বেসরকারি উদ্যোগগুলোতে ৫৯ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বয়স সে ক্ষেত্রে সমস্যা বলে বিবেচিত হচ্ছে না। সরকারি চাকরিতে ৫৯ বছরও খুব বেশি বিবেচিত হবে বলে মনে হয় না। তবে বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশিত কাজ আদায়ের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। সরকারি দফতরগুলোতে যে স্থবিরতা, ফাইলজট, কর্মহীনতার মচ্ছব লেগে থাকে তা দূর করার ব্যবস্থা দরকার। চাকরির বয়স বাড়ানোর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজের উৎসাহ বাড়লে সেটি হবে সুখকর অভিজ্ঞতা। দুই বছর বেশি সময়ে দেশসেবার মনোভাবই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগতভাবে সরকারি চাকরিজীবীরা লাভবান হয়েছেন, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে যথার্থ সেবা চায়। উপযুক্ত সেবা দিয়ে তারা মানুষের প্রত্যাশার প্রতিদান দিলে সেটি হবে সবচেয়ে খুশির ব্যাপার।

No comments

Powered by Blogger.