শিশুদের ভ্রমণ এবং সাবধানতা

দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নাবিলা। পরীক্ষা শেষ হতেই বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরল দূরে কোথাও বেড়াতে যাবে। নাবিলার প্রথম পছন্দ ছিল সমুদ্র। তাই মেয়ের পছন্দকে মেনে নিয়ে সবাই সমুদ্র দেখতে গেল। ছোট্ট নাবিলা এর আগে এত দূরের ভ্রমণ আর করেনি। তাই ভীষণ উৎফুল্ল নাবিলা সবকিছু উপভোগ করছে চোখ-কান দিয়ে আর হৃদয়ে ধারণ করছে। কনকনে শীতের মধ্যেও নাবিলা গাড়ির জানালা বন্ধ করতে দেবে না। প্রকৃতি দেখতে দেখতে আর বাবা-মাকে


সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে করতে কক্সবাজার যখন পেঁৗছল, নাবিলা তখন অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সকালবেলা সৈকতে গিয়ে বিশাল সমুদ্রের জলরাশি দেখে নাবিলা তো খুশিতে আত্মহারা। অতি উল্লাস আর উৎসাহে সমুদ্রের নোনাপানি ছেড়ে নাবিলা কিছুতেই উঠবে না। একাধিকবার সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি করে, আবার ভেজা কাপড় গায়েই শুকায়। ফলাফল দ্বিতীয় দিনেই নাবিলার প্রচণ্ড জ্বর এলো, সঙ্গে ঠাণ্ডা কাশি। একেবারে নাক বন্ধ অবস্থা। যে নাবিলা পেছনের দুটি দিন কতই না আনন্দ-উল্লাসে কাটিয়েছে, সে এখন বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। অচেনা-অজানা পরিবেশ। মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের উৎকণ্ঠার শেষ নেই। বেড়ানোটাই মাটি হয়ে গেল। মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হলো। সব প্রোগ্রাম বাতিল করে নাবিলাকে একটু সুস্থ করে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। আরও যেসব জায়গা বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল, তার কিছুই হলো না। শীত মৌসুমে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্র, পাহাড় কিংবা বনে বেড়াতে পছন্দ করেন। বেড়ানোর জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়। কিন্তু যারা ছোট বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে যাবেন তাদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে আর নাবিলার মতো বেড়ানোর পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে না। এ ক্ষেত্রে যা করা উচিত তা হলো_
ষ সবার জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড় সঙ্গে নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য একাধিক কাপড়, যাতে একটি ভিজে গেলে বা ময়লা হলে আরেকটি পরানো যায়।
ষ দেশের সব স্থানে আবহাওয়া এক রকম নয়। তাই নতুন পরিবেশে গেলে সে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ার জন্য নিজেদের একটু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ষ যেসব শিশু খোলা বাতাসে খুব একটা বেড়ানোর সুযোগ পায় না তাদের হুট করেই সেসব পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। পরিবেশটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সময় দিতে হবে।
ষ অনভ্যস্ত শিশুদের সমুদ্রের পানিতে বেশি গোসল না করাই ভালো। ভেজা কাপড় শরীরে কখনোই শুকানো উচিত নয়। এতে ঠাণ্ডা-কাশি লেগে জ্বর হতে পারে।
ষ দিনের বেলায় সৈকতে রোদ থাকে। তাই বাতাসে শীতল হওয়ার প্রবণতা একটু কমই থাকে। কিন্তু সন্ধ্যার পর সৈকতে থাকতে হলে গায়ে গরম কাপড় অবশ্যই রাখতে হবে।
ষ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। একেক জায়গার খাবারের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তাই নতুন পরিবেশে যা পাই তাই খাই_ এমন হলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা সহনীয় নাও হতে পারে। উল্টাপাল্টা কিছু খেলে পেটের সমস্যা বা অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ষ প্রয়োজনে শিশু সব সময় যা খেয়ে অভ্যস্ত সেসব খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলে ভালো।

লেখা : মেহেরুন নেছা রুমা
মডেল : তানহা

বিশেষ টিপস
ষ শিশুদের নিয়ে ভ্রমণের সময় সঙ্গে অবশ্যই ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন। সঙ্গে জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশির ওষুধ, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি অবশ্যই রাখতে হবে।
ষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু টাকা সঙ্গে রাখতে হবে, যাতে অসুস্থ হলে কিংবা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে কাজে লাগানো যায়।
ষ শুকনো কিছু খাবার, পানীয় সঙ্গে রাখা ভালো।
ষ শিশুদের অচেনা কারও কিছু দেওয়া জিনিস খেতে দেবেন না এবং অচেনা মানুষের কাছে যেতে দেবেন না। মনে রাখতে হবে, মানুষের পায়ে পায়ে বিপদ এবং সুযোগ পেলেই তা মানুষকে আঁকড়ে ধরে।

No comments

Powered by Blogger.