সার্ক জ্বালানি বাণিজ্য-পারস্পরিক লাভজনক নির্ভরতা

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন জ্বালানি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার তাগিদ সবসময়ই ছিল। কিন্তু সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক নানাবিধ বাধ্যবাধকতার কারণে এই অঞ্চলের উন্নয়নের প্রধান শর্ত জ্বালানি সম্পদ নিয়ে বৃহত্তর সহযোগিতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। এমনকি ২০০৫ সালে ইসলামাবাদ সম্মেলনে এ ধরনের সহযোগিতার বিষয়টি সদস্য দেশগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব স্বীকার করা এবং এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালানো ও রিপোর্ট


পেশের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবিকে দায়িত্ব দিলেও নানা কারণে বিষয়টি বিলম্বিত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এডিবি রিপোর্ট প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পেরেছে এবং আগামী সার্ক মালদ্বীপ সম্মেলনে সমীক্ষাটি পেশ করা হবে। কিন্তু এবারের শীর্ষ সম্মেলনেও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, সমীক্ষা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য সদস্য দেশগুলো কিছু সময় চাইতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা দেখা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় অভিন্ন জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও জ্বালানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা পিছিয়ে যেতে পারে। সে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরস্পর লাভজনক ও উন্নয়নে উপকারী একটি প্রকল্পের জন্য দুঃখজনক। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রয়েছে জ্বালানি ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সুবিধা ও সমস্যা। যেমন ভুটানের রয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা। নেপালেও সে সম্ভাবনা বেশ রয়েছে। অথচ তাদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো কারিগরি জ্ঞান ও আর্থিক সক্ষমতা নেই। আবার ভারত ও বাংলাদেশে জ্বালানি সম্পদের প্রাপ্তিযোগ থাকলেও উন্নয়ন চাহিদার তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। পাকিস্তানের জ্বালানি সক্ষমতা কিছুটা বেশি হলেও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন চাহিদা বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয়। তবে দেশগুলো বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার বাড়িয়ে তাদের চাহিদার একটি অংশ পূরণ করতে পারে। এ জন্য দরকার হবে প্রয়োজনীয় তহবিল ও প্রযুক্তি। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সক্ষমতাকে ব্যবহার করতে হবে। আবার এ অঞ্চলের বাইরে থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস ও তেল আনা এবং তা অভিন্ন স্বার্থে ব্যবহার করতে হলে আঞ্চলিক জ্বালানি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বিলম্বে হলেও এডিবি এ ব্যাপারে সমীক্ষা রিপোর্টটি চূড়ান্ত করতে পারায় এবং গত সেপ্টেম্বরে সার্ক জ্বালানি মন্ত্রীদের বৈঠকে রিপোর্টের সুপারিশ ও পরামর্শ নীতিগতভাবে গৃহীত হওয়ায় আমরা বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী হয়েছি। তবে এই অগ্রগতি যেন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে সদস্য দেশগুলোকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা আশা করব, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও জ্বালানি বাণিজ্যের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। অভিন্ন লাভজনক নির্ভরশীলতা গড়ে উঠলে সার্কের দ্রুত কার্যকর আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.