‘আমাদের গৃহে আপনাকে স্বাগত’


ডিয়েগো ম্যারাডোনা জেলে। দুবাই কেন্দ্রীয় কারাগারে! এটুকু পড়েই আঁতকে ওঠার কথা সবার। কদিন ধরেই রেফারিদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন আল ওয়াসল কোচ। একটুতে মাথাটা যেভাবে তাঁর গরম হয়ে ওঠে, যেকোনো সময় যেকোনো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতেও পারেন। এর মধ্যে কী এমন করলেন যে সোজা কারাগারে!
আসলে সে রকম কিছুই ঘটেনি। দুবাই কেন্দ্রীয় কারাগারে ম্যারাডোনা গিয়েছিলেন অতিথি হিসেবে।


সেখানকার বন্দীদের নিয়ে একটা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। কারাগারের বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে এসে ম্যারাডোনা খেলা দেখেছেন। বিজয়ীদের পুরস্কৃত করেছেন। এরপর দিয়েছেন উজ্জীবিত এক বক্তৃতা। আল ওয়াসল কোচকে কাছে পেয়ে আবেগে ভেসে গিয়েছিল জেলখানার বাসিন্দারাও।
এদের একজন, নাইজেরিয়ার ৩৭ বছর বয়সী এনস ওগাদা যেমন বললেন, ‘এই মানুষটার দেখা পাওয়ার জন্য কত জন কত কিছুই না করে। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য তো ম্যারাডোনার দর্শন পাওয়া একটা স্বপ্ন। এটা যেন ঈশ্বরের প্রার্থনায় সাড়া পাওয়ার মতো। তাঁকে অবশেষে দেখতে পেলাম। তিনি সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। হাত মিলিয়েছেন। এটা ছিল অসাধারণ একটা মুহূর্ত।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল দুবাই পুলিশ। পুলিশ বিভাগের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই বিশেষ আয়োজন। নাইজেরিয়া বনাম ক্যামেরুন নামের দুটি দল খেলেছে ফাইনালে। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টটি শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জিতেছে নাইজেরিয়া। ফুটবল ছাড়াও ভলিবল, বাস্কেটবলসহ আরও কিছু খেলার আয়োজনও করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ম্যারাডোনা মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। এরপর গ্যালারিতে নিজের আসনে বসেছেন। তাঁর সম্মানে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়নৃত্য দেখানো হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে বিভিন্ন অভিযানে পুলিশ বাহিনী কী করে, নাটকের মাধ্যমে সেটির উপস্থাপনাও ছিল। তবে এসবে নয়, সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন একজনই। তাঁকে স্বাগত জানাতে অনেকের হাতে ধরা ছিল ব্যানার—‘ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আমাদের গৃহে আপনাকে স্বাগত।’
ম্যারাডোনা নিজেও একসময় অন্ধকার পথে হেঁটেছেন। মাদকের পথে। যে পথ থেকে বেশির ভাগ মানুষই ফিরে আসতে পারে না। সেই জালে বন্দী থেকেই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ম্যারাডোনা দেখিয়ে দিয়েছেন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই সম্ভব। মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার মানুষের সেই ইচ্ছাশক্তির কথাই তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তৃতায়। বলেছেন, এই কারাগার বন্দীদের জন্য সাময়িক ঠিকানামাত্র। তারা যখন মুক্তি পাবে, সবাই যেন অন্ধকারের পথ ছেড়ে আসে আলোয়। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.