পাটের হাটে চাঁদাবাজি-বোঝার ওপর কেন শাকের আঁটি?

জামালপুরের বিভিন্ন হাটে পাট বেচতে আসা চাষিদের কাছ থেকে যে হারে টোল আদায় করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে অপরাধকর্ম। হাট-বাজার ইজারার সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে যেখানে মণপ্রতি দুই টাকা টোল নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেখানে যদি ১০-১২ টাকা আদায় করা হয়, সেটাকে আর কী বলা যেতে পারে? আবার 'টোল' যখন রসিদ ছাড়া আদায় করা হয়, তখন সেটাকে চাঁদাবাজি বলাও অত্যুক্তি নয়। শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে,


আদায় করা এ অর্থের পরিমাণ মাসে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত পাটের বাজারে বারোভূতে মিলে বেশ বড় খেলা জমিয়েছে বটে! স্থানীয় প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা মাত্রাতিরিক্ত টোল আদায়ের ঘটনা সাংবাদিকের কাছে শুনে আকাশ থেকে পড়তে চেয়েছেন, তাদের কেউ কেউ যে এই খেলার সঙ্গে যুক্ত নেই তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। এ আর নতুন কী যে, বারোভূতের খেলায় ভূত তাড়ানোর সরষেও কখনও কখনও শামিল হয়। সংশ্লিষ্টরা কী 'প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা' গ্রহণ করেন, আমরা সেদিকে নজর রাখব। ইজারাদারদের খুঁটির জোরও এই সুযোগে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। একই সঙ্গে আমরা নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে দিতে চাই যে, দেশের অন্য স্থানেও এমন অনিয়ম চলতে পারে। সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে স্বতঃপ্রণোদিত ব্যবস্থাই সে ক্ষেত্রে হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখা জরুরি, আর দশটা কৃষিপণ্যের সঙ্গে পাটের বাজারের কৌশলগত পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গত দুই দশক মন্দার পর বাংলাদেশি পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। গত দুই বছর পাটের বাম্পার ফলন ও আশাতীত দামের পর এবার বাজার পড়তির দিকে। এই পরিস্থিতিতে প্রণোদনার বদলে যদি হতাশ চাষিরা বাজারবহির্ভূর্ত ঝামেলায় পড়ে; তা বোঝার ওপর শাকের আঁটিই বিবেচিত হবে। আমরা চাই, পাটের সুদিন টেকসই হোক। সে ক্ষেত্রে এসব শাকের আঁটি নামিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.