পবিত্র কোরআনের আলো-কাল্পনিক দেব-দেবীর নামে মুশরিকদের হুমকি উড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ

৯৫. আলাহুম আরজুলুন ইয়ামশূনা বিহা আম লাহুম আইদিন ইয়াবতি্বশূনা বিহা; আম লাহুম আ'ইউনুন ইউবসিরূনা বিহা আম্ লাহুম আ-যা-নুন ইয়াছ্মাঊ'না বিহা; ক্বুলিদ্ঊ' শুরাকা-আকুম ছুম্মা কীদূনি ফালা তুনযিরূন। ১৯৬. ইন্না ওয়ালিয়্যিইয়াল্লাযী নায্যালাল কিতাবা ওয়া হুয়া ইয়া তাওয়াল্লাস্ সালিহীন। ১৯৭. ওয়াল্লাযীনা তাদ্ঊ'না মিন্ দূনিহী লা-ইয়াছ্তাত্বীঊ'না নাস্রাকুম ওয়ালা আনফুছাহুম ইয়ানসুরূন।


১৯৮. ওয়া ইন তাদ্ঊ'হুম ইলাল হুদা লা-ইয়াছমাঊ'; ওয়া তারাহুম ইয়ানযুরূনা ইলাইকা ওয়া হুম লা ইউবসিরূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৯৫-১৯৮]

অনুবাদ
১৯৫. তাদের কি পা আছে, যা দিয়ে তারা হাঁটবে? অথবা তাদের কি হাত আছে, যা দিয়ে তারা ধরবে? অথবা তাদের কি চোখ আছে, যা দিয়ে দেখবে? নাকি তাদের কান আছে, যা দিয়ে শুনবে? আপনি বলুন, তোমরা যাদের আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করছ তাদের সবাইকে ডাকো। তারপর (তাদের নিয়ে) আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো, আর এ ক্ষেত্রে আমাকে কোনো রকম ছাড়ও দিয়ো না।
১৯৬. আমার অভিভাবক তো আল্লাহ, যিনি কিতাব নাজিল করেছেন, আর তিনি পুণ্যবানদের অভিভাবকত্ব করেন।
১৯৭. তোমরা তাকে ছেড়ে অন্য যাদের কাছে প্রার্থনা জানাও তারা তোমাদের কোনো সাহায্য করতে পারবে না, তাদের নিজেদেরও কোনো রকম সাহায্য করতে পারে না।
১৯৮. (হে নবী) আপনি যদি তাদের সঠিক পথের দিকে ডাকেন, তবে তারা তা শুনবে না। আপনি তাদের দেখবেন যেন তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা সত্যটা দেখতেই পায় না।

ব্যাখ্যা
আয়াতগুলোর শানেনুজুল এ রকম_রাসুল (সা.) যখন মুশরিক কোরাইশদের সামনে মূর্তি পূজার অসারতা যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন এবং তাদের মূর্তি পূজা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানালেন, তখন তাদের মধ্যে উল্টো প্রতিক্রিয়া হলো। তারা রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে তাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনল এবং তাঁর প্রতি দৈবশক্তির প্রতিশোধের ভয় দেখাতে লাগল। তারা বলল, আপনি যে আমাদের দেবতাদের সম্পর্কে এমন সব কথা বলছেন, যা দ্বারা বোঝা যায় তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আপনি আমাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন এবং আমাদের দেব-দেবীদের অপমান করছেন। এ কারণে আপনি দৈবশক্তির রোষানলে পড়বেন, তারা আপনাকে শাস্তি দেবে। এই আয়াতে মুশরিকদের এ রকম অমূলক ভীতি প্রদর্শনের জবাব দেওয়া হয়েছে। এখানে বস্তুনিষ্ঠ যুক্তি তুলে ধরার মাধ্যমে মুশরিকদের অন্ধবিশ্বাসকে নাকচ করা হয়েছে। দেব-দেবীর ভীতিকে তুচ্ছ করা হয়েছে এবং অন্ধবিশ্বাসজনিত ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে মুশরিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা যদি তোমাদের দেব-দেবীদের নিয়ে রাসুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চাও, তবে করো। আসলে মুশরিকদের তথাকথিত দেব-দেবীদের কোনো ক্ষমতা নেই এবং অন্ধবিশ্বাসের ধর্মের কোনো সারবত্তা নেই_এটাই হলো সত্য। পরবর্তী আয়াতগুলোতে এ সত্যটাকেই স্পষ্ট করে এবং ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে একত্ববাদের মূল তাৎপর্য এবং অংশীবাদের বিভ্রান্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মুশরিকরা যে তাদের পূর্বপুরুষের ধর্ম নিয়ে অন্ধবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, এ বিষয়টি রাসুল (সা.)-কে অবহিত করা হয়েছে। ১৯৮ নম্বর আয়াতে মুশরিকদের ধর্মান্ধতা ও অনড় মনোবৃত্তির চিত্রটা তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে মুশরিকদের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার প্রয়োজন নেই, রাসুলের কর্তব্য শুধু তাঁর কাজ করে যাওয়া।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.