স্বপ্নপূরণ তবে... by তারেক মাহমুদ

দিনের খেলা শেষে সেই যে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন, আর বের হচ্ছেন না। মশার উপদ্রবের মধ্যেও করিডরে সাংবাদিকদের অপেক্ষা। কখন বের হবেন সাকিব আল হাসান। কখন জানা যাবে, সেঞ্চুরি আর পাঁচ উইকেটের অর্জন একসঙ্গে হলে কেমন লাগে একজন ক্রিকেটারের। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সাদা সোয়েটার পরা সাকিব বের হলেন সদলবলে। হোটেলে ফেরার বাসে ওঠার আগে মিনিট দুয়েক সাংবাদিকদের মুখোমুখি। কেমন লাগছে...একটা স্বপ্ন কি


পূরণ হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। সাকিব যতটা না কথা বললেন, তার চেয়ে বেশি উত্তর দিলেন শরীরী ভাষায়, যে ভাষার অনুবাদ হতে পারে একটাই—দল ব্যর্থ হলে ব্যক্তিগত সাফল্যের দ্যুতি আর থাকে না।
মুখেও বললেন সেটা, ‘এটা একটা ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ। তবে দলের ফলাফল ভালো না হলে এ নিয়ে গর্বের কিছু নেই। দল ভালো করলে তার পরই সবকিছু। নিজের বলে কিছু নেই। দিনশেষে সবই দলের।’
তার পরও আজ ঢাকা টেস্ট শেষ হলে যখন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব কষতে বসবে সবাই, সিরিজের সেরা অর্জন হয়েই আসবে সাকিবের ‘ডাবল’। সাকিবের জন্য এটা একটা অপেক্ষার সমাপ্তিও। একসঙ্গে সেঞ্চুরি আর ৫ উইকেটের সম্ভাবনা এর আগে উঁকি দিয়েই গেছে কেবল, অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে আরও ভালো করে প্রতিষ্ঠার মাইলফলকটি ছোঁয়া হয়নি কখনো। এই টেস্টেও সেঞ্চুরি করার পর ৫ উইকেট পেতেই হবে, স্থির করেননি তেমন কোনো লক্ষ্য, ‘আমি কখনোই টার্গেট সেট করি না। তবে ৩ উইকেট পাওয়ার পর মনে হচ্ছিল, আর ২টা পেলেই তো ৫টা...!’
একটা স্বপ্নপূরণ আরেকটা স্বপ্নের দরজা খুলে দেয়। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি আর ৬ উইকেট পাওয়ার পর হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো কিছুর আশা ছিল মনে। কিন্তু ৭৬ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর উইকেটে গিয়ে যখন নিজেও বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না, স্বপ্নভঙ্গের ধাক্কাও বোধ হয় লাগল। দিনশেষে সেই হতাশা সাকিবের কণ্ঠে, ‘আউট হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। অপরাজিত থাকলে ভালো লাগত।’
সাকিবের আউটের পর পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের উৎসব দেখে মনে হচ্ছিল, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কোনো ম্যাচই বুঝি জিতে গেছে দলটা! আসলে ব্যাট-বলে পারফরম্যান্স এতটাই ভালো যে, সাকিবের নামটা এখন বাংলাদেশ দলেরই সমার্থক। দিনশেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিবের মতোই আরেকজন, পাকিস্তানের স্পিনিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ দিয়ে গেলেন সেই স্বীকৃতি, ‘দারুণ খেলছে সাকিব। আমার মনে হয়, ওয়ানডেতে রান না করায় ও একটু চাপে ছিল। এরপর টেস্টে নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে সে এবং সেটা কাজেও লাগাচ্ছে। সেঞ্চুরির পর বোলিংটাও করেছে অসাধারণ। দলের জন্য এত কিছু করছে, প্রশংসা তার প্রাপ্যই।’
প্রতিপক্ষ শিবিরই এই চোখে দেখে, বাংলাদেশ দল তো আরও ভালো বোঝে, সাকিব তাদের জন্য কী। বিপর্যয়ে প্রতিরোধের দেয়াল মানেই তো সাকিব! কিন্তু বিপর্যয় ঠেকানোর দায়িত্ব না দিয়ে বিপর্যয় এড়ানোর কাজটাই কি করানো যায় না তাঁকে দিয়ে? সাকিবকে বিশ্রাম দিতেই সেটা করতে পারছেন না কোচ। ‘৪৩ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর এসে সে ১৪৪ রান করেছে। খুব ভালো হতো, সে যদি ৫ নম্বরে ব্যাট করত, তাকে যদি ৪০ ওভার বল করতে না হতো। সে ভালো খেলোয়াড়, ব্যাট-বলে বাংলাদেশ দলটাকে এই মুহূর্তে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে-ই। তাকে বিশ্রামেরও সময় দিতে হবে। আর সাকিবও যেখানে আছে, সেখানেই খুশি’—কাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন স্টুয়ার্ট ল।
তবু দুঃখ, সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬ উইকেটের গৌরবটা কাল খুব বড় খুশির উপলক্ষ হতে পারেনি সাকিবের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.