কাপড়ের নামে বিলাসবহুল গাড়ি-জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

দুর্নীতির নমুনা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়! সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, গার্মেন্ট কারখানার জন্য কাপড় আমদানি করা হবে। আনা হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং ৫৫টি এলসিডি ও এলইডি টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য। কিন্তু ৪০ ফুট দীর্ঘ এই কনটেইনারটিতে কোনো কাপড়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি। গাড়িসহ অবৈধ পণ্যের এই কনটেইনারটি আটক করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের


লোকজন অবৈধ পণ্য ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে। কিন্তু এরা কি বেশিদিন লাপাত্তা থাকবে? সব কিছু কি 'ম্যানেজ' হয়ে যাবে না? সাভারের গোল্ডটেঙ্ লিমিটেড নামের যে প্রতিষ্ঠানটি এই কাপড় আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে? নাকি আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে তারা বেরিয়ে যাবে? বন্দরে অবৈধ গাড়ি আমদানির একটি ঘটনা ধরা পড়লেও আমরা কি জানি, চোখের আড়ালে এ ধরনের আরো কত ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন?
অবৈধ পথে শুধু গাড়ি বা এলসিডি টেলিভিশন নয়, প্রসাধনসামগ্রীসহ আরো বহু বিলাসবহুল পণ্যই প্রতিদিন অবাধে ঢুকছে দেশের বাজারে। চলে যাচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। বলা হয়ে থাকে, বৈধ পথে এখন যে পরিমাণ পণ্য দেশে আসে, অবৈধ পথে আসে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের প্রবাহ দিন দিন যেখানে বাড়ার কথা, সেখানে দেখা যায়, দিন দিনই তা কমছে। এরও একটি প্রধান কারণ অবৈধভাবে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এর ফলে হুন্ডির আকারে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশই চলে যায় এসব অসৎ ব্যবসায়ীর হাতে। আবার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি মূল্য দেওয়ায় অনেকেই ব্যক্তিগত বৈদেশিক মুদ্রা এদের হাতে তুলে দেয়। আর তার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতির ওপর। অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি আজ চাপের মুখে। তার জন্য আর্থিক খাতে অভ্যন্তরীণ নীতির দুর্বলতা যেমন দায়ী, একইভাবে দায়ী সীমাহীন অবৈধ আমদানি বা চোরাচালান। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতি কেবলই তাড়া করে ফিরছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকে।
তিন বছরে সরকারের অনেক ব্যর্থতার মধ্যে অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারাটা খুবই পীড়াদায়ক। সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরসহ সীমান্ত ছাপিয়ে অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। যাদের দায়িত্ব এগুলো ঠেকানো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের একটি অংশ এই অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে যায়। একে রোধ করতেই হবে। অস্তিত্বের স্বার্থেই আমাদের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যারা অবৈধভাবে গাড়ি আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যদিকে শুল্কবন্দরগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করা হোক। পাশাপাশি সেগুলোর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আধুনিক স্ক্যানিং ছাড়া যেন একটি কনটেইনারও বেরোতে না পারে, একটি অবৈধ পণ্যও দেশের বাজারে প্রবেশ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.