কালের আয়নায়-দুর্বল গণতন্ত্রই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দুষ্ট ভ্রূণের সূতিকাগার by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

পমহাদেশের অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানে জারদারির যে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে; তা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। মার্কিন ছাতা তাকে রক্ষা করে চলেছে। নইলে হয় তালেবানদের হাত অথবা সামরিক বাহিনীর দ্বারা বহুদিন আগে জারদারি সরকারের পতন ঘটত। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন প্রথম মহাযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানির
চেয়েও খারাপ ত্রিশের ইউরোপে যখন ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থানের সূচনা হয়, তখন এক ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী সতর্কবাণী


উচ্চারণ করেছিলেন যে, 'যখন কোনো দেশে গণতন্ত্র দুর্বল হয় এবং বুদ্ধিজীবীরা সুবিধাবাদী হয়ে ওঠে, সে দেশে ফ্যাসিবাদের অভ্যুদয় অনিবার্য।' তিনি কথাটা বলেছিলেন জার্মানিতে হিন্ডেনবার্গ ও ইতালিতে ভিক্টর ইমানুয়েলের গণতান্ত্রিক সরকারের ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া এবং ফ্যাসিবাদী হুমকির মুখে ক্রমাগত তোয়াজ ও আপসের নীতি গ্রহণ করা দেখে। এই সমাজবিজ্ঞানী বলেছিলেন, জার্মানি ও ইতালিতে গণতন্ত্রের পতন এবং ফ্যাসিবাদের প্রতিষ্ঠা আসন্ন।
তার ভবিষ্যদ্বাণী মাত্র কিছুদিনের মধ্যে অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। জার্মানিতে হিন্ডেনবার্গ সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে ক্রমশ সাময়িক ও অসাময়িক আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এবং নাৎসি পার্টির প্রধান হিসেবে হিটলারকে ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইতালিতে ভিক্টর ইমানুয়েল সরকারেরও ভূমিকা ছিল একই। ফ্যাসিন্ত বেনিতো মুসোলিনি মুষ্টিমেয় সমর্থক নিয়ে রোম দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুলিশ বাধা না দেওয়ায় মুসোলিনি নিজেও বিস্মিত হয়েছিলেন। ইমানুয়েল সরকারের নির্দেশে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকায় মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট দলের মুষ্টিমেয় সদস্য রোম শহর বিনা বাধায় কব্জা করে নিতে পেরেছিল।
ত্রিশের দশকে ইউরোপে বামপন্থি রাজনীতি ছিল শক্তিশালী, কিন্তু বিভক্ত ও পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত। জার্মানিতে কমিউনিস্ট পার্টি হিটলারের অভ্যুত্থানে কোনো আশঙ্কা পোষণ করেনি। তারা তখন সোস্যালিস্টদের সঙ্গে তাত্তি্বক বিরোধে লিপ্ত এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিয়ে তার প্রতিরোধে প্রচারণা যুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ব্যস্ত। ইতালিতেও বামপন্থিদের ছিল একই অবস্থা। তারাও তখন বিভক্ত ও আত্মদ্বন্দ্বে লিপ্ত। মুসোলিনি এককালে সোস্যালিস্ট ছিলেন। সে জন্য তার দিক থেকে যে ফ্যাসিবাদী বিপদ আসছে, তাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। হিটলার ও মুসোলিনি ক্ষমতায় এসে এই কমিউনিস্ট ও সোস্যালিস্ট দুই দলের ওপরই কঠোর দমননীতি চালিয়েছেন।
ত্রিশের দশকের ইউরোপে মুষ্টিমেয় দূরদর্শী পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী ছাড়া অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী সুবিধাবাদী এবং অনুগ্রহভোগী শ্রেণীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি যে ব্রিটেন পরে হিটলারের দ্বারা আক্রান্ত ও ধ্বংস হওয়ার মুখে পড়েছিল, সেই ব্রিটেনের, বিশেষ করে অক্সফোর্ডের একদল নাক উঁচু বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিত পর্যন্ত স্লোগান দেওয়া শুরু করেছিলেন 'নবঃঃবৎ ফবধফ ঃযধহ ৎবফ' (লাল (কমিউনিস্ট) হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো)।
ব্রিটেনের বিগ মিডিয়া ডেইলি মেইল থেকে ডেইলি টেলিগ্রাফে ইউরোপে ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থান আশঙ্কাকে মোটেই পাত্তা দেওয়া হয়নি। বরং রেড টেরোরিজম (কমিউনিস্ট সন্ত্রাস) সম্পর্কে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার চালিয়ে (বর্তমানের ইসলামিক টেরোরিজমের মতো) তারা ফ্যাসিজম ও কমিউনিজমকে একই পাল্লায় তুলে (এখন বাংলাদেশে যেমন দুটি বর্ণচোরা নিরপেক্ষ মিডিয়া এবং তার ভাড়াটিয়া বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতকে একই পাল্লায় তুলে বিচার করেন) দুটিকে সমান বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে 'কমিউনিস্ট শত্রুকে' রোখার ওপরই বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এই মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের ভুল সংশোধনেরও সময় পাননি। তার আগেই হিটলার তার বিশাল ঝটিকা বাহিনী নিয়ে ব্রিটেনসহ সারা ইউরোপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
অতীতের ইউরোপের এই কাহিনী আজ এই লেখায় এ জন্যই তুলে ধরলাম যে, বর্তমান উপমহাদেশের কিছু কিছু সমাজবিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, একুশ দশকের গোড়ায় উপমহাদেশে যে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে, তা ফ্যাসিবাদের ভাইরাস জন্ম দেওয়ার উপযোগী পরিবেশ। এতকাল ভারতকে তার বিশালত্বের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলো ভয় করলেও ভারতীয় গণতন্ত্র ছিল এই উপমহাদেশে গণতন্ত্রের শক্তিশালী রক্ষা প্রাচীর। সেই প্রাচীরে এখন ফাটল ধরেছে। বর্তমান মনমোহন সরকারকে অনেকেই আখ্যা দিচ্ছেন ভারতের সবচেয়ে দুর্বল গণতান্ত্রিক সরকার। নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ভারত এখন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) অন্যতম প্রধান শক্তি নয়। ভারতের জোটনিরপেক্ষতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানে জারদারির যে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে; তা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। মার্কিন ছাতা তাকে রক্ষা করে চলেছে। নইলে হয় তালেবানদের হাত অথবা সামরিক বাহিনীর দ্বারা বহুদিন আগে জারদারি সরকারের পতন ঘটত। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন প্রথম মহাযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানির চেয়েও খারাপ। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদের ভাইরাস জন্ম দেওয়ার চমৎকার উৎস।
শ্রীলংকার তামিল-সন্ত্রাস উপশমিত বটে, কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রশাসনের খুবই নড়বড়ে অবস্থা। নেপালে রাজতন্ত্র নেই। কিন্তু মাওবাদীদের ক্ষমতা থেকে হটাতে গিয়ে গণতন্ত্র তেমন সুরক্ষা পাচ্ছে না। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা এখনও ক্ষমতায়। অং সাং সু চি কারামুক্ত হয়েছেন বটে, কিন্তু সামরিক জান্তাকে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে ভারতও এখন চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একমাত্র বাংলাদেশে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা গণতান্ত্রিক মহাজোটের মহাবিজয়ের পর মনে করা হয়েছিল, এতদিনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দৃঢ় ভিত্তি পেতে যাচ্ছে এবং অতীতের সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনের লেগাসি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে যাচ্ছে।
মানুষের এই আশা সর্বাংশে পূর্ণ হয়নি। বিরাট বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় বসা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে দলে কিংবা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার কাজে তেমন এগিয়ে নিতে পারছে না। আওয়ামী লীগকেও সামরিক ও স্বৈরাচারী আমলের লেগাসি বহন করে চলতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক সমালোচক বলেছেন, আগের হাসিনা সরকার ছিল কোয়ালিশননির্ভর। তাই তখন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কিন্তু এবারের সংসদে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও স্থায়ী করার লক্ষ্যে এগোতে পারছেন না।
দেশটিতে দৃশ্যত সন্ত্রাসীরা অনেকটাই দমিত। কিন্তু সন্ত্রাসী মৌলবাদ এবং রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ (বিএনপি ও জামায়াতের মাধ্যমে) এখনও গণতন্ত্র ও শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে রয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে শক্তির মহড়াও দেখাচ্ছে তারা। সরকারের নীতি এখানে দ্বিমুখী। একদিকে তারা দু'একটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, তাদের প্রকাশ্য খুন-খারাবিও বন্ধ করেছেন। কিন্তু এই সন্ত্রাসের যে উৎস মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তার প্রতি কঠোর হতে পারছেন না। তাদের সঙ্গে আপস করে চলার নীতি অনুসরণ করছেন। '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত না করা, সংবিধানে ধর্মীয় বিধিবিধান রেখে দেওয়া, দলের ভেতর ধর্মীয় কালচার ক্রমাগত বাড়তে দেওয়া সরকারের এই দুর্বলতা প্রমাণ করে।
অর্থাৎ জাতীয় সংসদে গণতান্ত্রিক দলটি বিরাট সংখ্যাশক্তির অধিকারী। কিন্তু তাদের গণতান্ত্রিক সরকার শক্তিশালী নয়। আগামী নির্বাচনে তারা এককভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন কি-না, তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যেই বর্তমান সরকার অনেক গণকল্যাণমূলক কাজ করা সত্ত্বেও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পথে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন। অনেকে এমন সন্দেহও করেন যে, একটি অদৃশ্য শক্তির কাছে এই সরকারের হাত-পা বাঁধা। এই সন্দেহটি সত্য হলে, বাঁধা হাত-পা মুক্ত করার কৌশল জানা না থাকলে, সেই কৌশল প্রয়োগের সাহস না থাকলে গণতন্ত্রকে স্বনির্ভর ও কার্যকর করা যায় না এবং কখনও যাবে না।
বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি যতটা সংগঠিত, গণতান্ত্রিক শক্তি মোটেই ততটা সংগঠিত নয়। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা এখন সবচেয়ে বেশি প্রকট। ঠিক ত্রিশের জার্মানির হিন্ডেনবার্গ সরকারের মতো বর্তমান বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমশ সাময়িক ও অসাময়িক আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাম দলগুলোও তাদের শক্তি জোগাতে পারছে না। ত্রিশের জার্মানির মতো তারাও বিভক্ত এবং আত্মকলহে লিপ্ত। তাত্তি্বক বিরোধ অনেকটা কমেছে। কিন্তু নেতৃত্বের কলহ মেটেনি। ফলে এককালের শক্তিশালী জনসমর্থন তাদের নেই এবং সরকারের ওপর তাদের কোনো চাপ সৃষ্টির শক্তি না থাকায় সরকারও ক্রমশ ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়ারও একটা বড় অংশের ভূমিকা ত্রিশের ইউরোপের সুবিধাবাদী ও অনুগ্রহভোগী বুদ্ধিজীবীদের মতো। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতকে এক চোখে দেখেন এবং ফ্যাসিবাদ ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে অনেক সময় আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদকে আনুকূল্যতা দান করতে থাকেন। তারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতার জন্য '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বৈধতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং গণবিরোধী শক্তিকে কঠোরভাবে দমন করতে গেলে তাকে আওয়ামী লীগের দমননীতি আখ্যা দেন। এক কথায় ত্রিশের ইউরোপের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর মতো তারা মহাগণতান্ত্রিক সাজতে গিয়ে গণতন্ত্রের খোলসে আবির্ভূত ফ্যাসিবাদকেই সমর্থন ও উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ত্রিশের ইউরোপের অবস্থার সাদৃশ্য লক্ষণীয়। তখন কমিউনিস্ট জুজুর ভয় দেখিয়ে ফ্যাসিবাদকে মাথা তোলার কাজে অর্থ ও প্রচার দ্বারা সাহায্য জুগিয়েছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এবং আমেরিকাই। পরে এই ফ্যাসিবাদ তাদের জন্যই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একুশ শতকের গোড়াতেও আমেরিকার 'নিউকন' নামের গোষ্ঠীই নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। সারাবিশ্ব গ্রাসই তাদের 'নিউওয়ার্ল্ড অর্ডার'-এর লক্ষ্য। ইসলামিক টেরোরিস্ট গোষ্ঠী তারাই সৃষ্টি করেছে এবং এখন আবার তারাই ধ্বংস করতে চাইছে।
আমেরিকার সৃষ্ট ক্ষুদে ফ্যাসিস্টরা এখন আমেরিকার মার খাওয়ার মুখেও এশিয়ার বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও আমাদের উপমহাদেশেও অত্যন্ত সক্রিয় এবং এসব দেশের গণতন্ত্র, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে তারা ইসলামী মৌলবাদী এবং ভারতে তারা হিন্দুত্ববাদী। বাংলাদেশের জামায়াত, শিবির, হিজবুত তাহ্রীর, আল মোজাহিনদের মতো ভারতের শিবসেনা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রভৃতি সমান হিংস্র এবং সন্ত্রাসী। বাংলাদেশের বিএনপি যেমন নামে গণতান্ত্রিক দল হলেও আসলে অতীতের মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করে, তেমনি ভারতেও বিজেপি নামে অসাম্প্রদায়িক (জনতা দল) হলেও অতীতের হিন্দু মহাসভার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঔরসজাত সন্তান।
এ ক্ষেত্রে গোটা উপমহাদেশে মৌলবাদী ফ্যাসিবাদকে রোখা এবং গণতন্ত্র ও গণঅধিকারকে সুরক্ষাদানের মহাদায়িত্ব গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সরকারের। এই গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশ ও ভারত দু'দেশেই বর্তমানে একটি দুর্বল অবস্থানে আছে বলে নিরপেক্ষ সমালোচকদেরও অভিমত। এই দুর্বলতা সম্পর্কে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারত যদি সতর্ক না হয় এবং ভারতে গণতান্ত্রিক সরকার দুর্বল হতে থাকে, তাহলে তা উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোতেও গণতন্ত্রের দুর্বল কাঠামোকে রক্ষায় সাহায্য জোগাতে পারবে না। ত্রিশের ইউরোপের বিপর্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটুক তা এই অঞ্চলের শান্তিকামী মানুষ চায় না। তাই গ্গ্নোবাল ইম্পেরিয়ালিজমের নিজস্ব স্বার্থপ্রণোদিত তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে উপমহাদেশীয় দেশগুলোর গণতান্ত্রিক সব মহলের উচিত নিজেদের বিপদ সম্পর্কে সময় থাকতে সতর্ক হওয়া এবং ঐক্যবদ্ধভাবে নবোত্থিত বিশ্ব ফ্যাসিবাদ ও দেশীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা।
লন্ডন, ৭ অক্টোবর, শুক্রবার ২০১১
 

No comments

Powered by Blogger.