কৃষকের ভোগান্তি শেষ কবে? by মুহাম্মদ নাজমুল হক

কৃষি একদিকে যেমন আমাদের খাদ্য জোগায়, অন্যদিকে শিল্প-কারখানার চাকা সচল রাখতে শিল্পের কাঁচামালেরও জোগান দেয়। কৃষির মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, শিল্পপণ্যের বাজার সৃষ্টি, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, পরনির্ভরশীলতা হ্রাস, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, খাদ্য সরবরাহসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই যে কৃষি, যা আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত রাখছে, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করছে, বৈদেশিক মুদ্রা


অর্জন করছে, শিল্পের কাঁচামালের জোগান দিয়ে দেশকে শিল্পসমৃদ্ধ করছে; সর্বোপরি ধান-চাল, ডাল, গম, ফলমূল, মাছ-মাংস উৎপাদন করে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছে, আমাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করছে_ এর নেপথ্য নায়ক কারা? কারা জীর্ণ-ক্লিষ্ট দেহে রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কাদা-পানি মাড়িয়ে, শীতে কাতর হয়ে নিদারুণ পরিশ্রম করে মহাজনের টাকা সুদের ওপর ধার নিয়ে এক বেলা খেয়ে-না খেয়ে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন? তারা এই বাংলার কৃষক। কিন্তু কৃষকরা তাদের অতি কষ্টে ফলানো ফসলের দাম পান না। ফসলে তার বিনিয়োগ ফেরত আসে না। মহাজনের টাকা শোধ করতে পারেন না। তাদের ওপর নেমে আসে নিষ্ঠুর নির্যাতন। এমন এক হতভাগা কৃষক মোঃ আজিজার রহমান (৬০), যার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে হাজতে ঢোকানো হয়েছে। তার অপরাধ, তিনি জনতা ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন আলু চাষ করবেন বলে। আলু চাষ করে আলু বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিনি আলুর যথাযথ দাম পাননি। আলু বিক্রির টাকায় তিনি যে বিনিয়োগ করেছিলেন, তা ফিরে আসেনি। ফলে ঋণও শোধ করতে পারেননি। ২০১০ সালে সুদে-আসলে সে ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার টাকার ওপর। আর তাতেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের। কৃষক আজিজার রহমানকে জেলে পাঠাতে পুলিশ পাঠিয়ে হাতকড়া পরানো হয়েছে। রাষ্ট্রের এক অন্ন জোগানদাতা ১০ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে অক্ষম, কিন্তু রাষ্ট্র তা মওকুফ করতে পারেনি। অথচ এই রাষ্ট্রের পরিচালক তথা জনপ্রতিনিধিরা কত কোটি টাকা বিলখেলাপি_ সে খবর কে রাখে? রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিরা কত হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে, সে প্রতিকার কি রাষ্ট্র করতে পেরেছে?
আমরা পত্রিকায় দেখেছি, সামান্য ঋণের জন্য ঋণ আদায়কারীরা কৃষকের ঘরের টিন খুলে নিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে গরু-ছাগল নিয়ে গেছে। কৃষকের স্ত্রী-কন্যার নাকের নোলক কেড়ে নিয়ে গেছে। আমরা দেখেছি, অনেক কৃষক দুঃখে-ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি, উন্নত দেশগুলোতে কৃষকদের আয় এবং মর্যাদা অনেক বেশি। সেসব দেশের সরকারও প্রতিটি কৃষি উপকরণে সাবসিডি আর রাষ্ট্রীয় সহায়তা দিয়ে থাকে। আর কৃষকরাও পরম মমতায় ও আনন্দে ফসল ফলান। অথচ আমাদের দেশের কৃষকরা সর্বক্ষেত্রে পেয়ে থাকেন বঞ্চনা আর ভোগান্তি। সর্বনিম্ন সম্মানটুকুও তারা পান না। সবসময়ই তারা অবহেলিত। রাষ্ট্র এ নিয়ে ভাববে কি? করবে কি কিছু এই হতভাগা কৃষকদের বঞ্চনা আর ভোগান্তির অবসান ঘটাতে?
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
 

No comments

Powered by Blogger.