এ যেন ক্যাচ ফেলার দিন

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স প্রায় এক যুগ হতে চলল; কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের তিন বিভাগে খুব কমই এক সঙ্গে জ্বলে উঠতে পেরেছে তারা। অধিকাংশ ম্যাচেই বাংলাদেশের বোলাররা ভালো করেন আর ব্যাটসম্যানরা হন ব্যর্থ। টাইগারদের বেলায় একটা কথা বেশ প্রচলিত, ব্যাটসম্যানরা নাকি বোলারদের লড়াই করার মতো পুঁজিই দিতে পারেন না। তবে মাঝে মধ্যে ব্যাটিং ভালো হলেও বোলাররা লাইন-লেংথেই বল রাখতে পারেন না। আবার ব্যাটিং-বোলিং
ভালো হলে ফিল্ডাররা একের পর এক ক্যাচ ছাড়েন। মোটকথা, কোনো এক অদৃশ্য কারণে যেন সবকিছু এক সূত্রে গাঁথা হয় না কখনোই।
সাকিব-নাফীসের কল্যাণে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা মন্দ হয়নি। এরপর কুয়াশা এবং কনকনে বাতাসে সিমিং কন্ডিশন পেয়েও পাকিস্তানকে চেপে ধরতে পারলেন না বোলাররা। বোলাররা অবশ্য যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন, কন্ডিশন বোলিং সহায়ক হলেও উইকেট কিন্তু পুরোপুরি ফ্ল্যাট। এই মরা উইকেটে বোলাররা আবার ব্যাপক খাটা-খাটুনি করে যে সুযোগগুলো তৈরি করেছিলেন সেগুলোর অধিকাংশই ফিল্ডারদের হাত গলে পড়ে গেছে। এ টেস্টে বাংলাদেশি ফিল্ডাররা ক্যাচ ধরেছেন সাতটি এবং স্টাম্পিং করেছেন ১টি। তবে এর আগে ক্যাচ ছেড়েছেন ছয়টি এবং স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেছেন একটি। এক ইনিংসে সাতটি সুযোগ হাতছাড়া হলে ভালো বোলিং করেও কোনো লাভ আছে? সুযোগ সৃষ্টি করে কী লাভ, যদি সেগুলো কাজেই না লাগানো যায়! এই যেমন সাতটি সুযোগ যদি বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারত, তাহলে কী দাঁড়াত মিরপুর টেস্টের অবস্থা?
পাকিস্তানি ওপেনার তৌফিক উমর রান করেছেন ১৩০। অথচ হাফ সেঞ্চুরি করার পরই তার প্যাভিলিয়নে চলে যাওয়ার কথা। তার রান যখন ৫৬, তখন কটবিহাইন্ডের আবেদন করতে গিয়ে উইকেটকিপার মুশফিক এতটাই বেখেয়াল হয়ে পড়েছিলেন যে, স্টাম্পিং করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন। ১০ রান পর রবিউলের বলে গালিতে নাজিমউদ্দিন তার ক্যাচ ফেলেন। ১১৮ রানের সময় সানির বলে তিন নম্বর সুযোগ দিয়েছিলেন; কিন্তু সেটাও হাতে রাখতে পারেননি শাহরিয়ার নাফীস। সে সময় তার সঙ্গী হিসেবে উইকেটে থাকা ইউনিস খান ব্যক্তিগত ১৫ রানের সময় নাসিরের বলে ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। শাহাদাত হোসেন রাজিব তা হাতে নিয়েও ফেলে দেন। শেষ পর্যন্ত ইউনিস করেন ৪৯ রান। এগুলো সব তৃতীয় দিনের কাহিনী। গতকাল চতুর্থ দিনেও তিনটি ক্যাচ ফেলেছে বাংলাদেশ দল। যার প্রথমটি পাক অধিনায়ক মিসবাহর। হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরই সাকিবের বলে মিড অনে তার লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন রবিউল। পরে ৭০ রান করে তিনি সাকিবের বলেই আউট হন। পাকিস্তান টপ অর্ডারের আরেকজন আসাদ শফিকও একটি সুযোগ দিয়েছেন। সানির বলে স্লিপে তার ক্যাচ ফেলেন রিয়াদ। যদিও শফিক এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তবে আরেকজন ঠিকই কাজে লাগিয়েছেন। ২৬ রানে নাসিরের বলে শর্ট মিড উইকেটে সানির হাতে জীবন পাওয়া আদনান আকমল জীবনের প্রথম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।
এক ইনিংসে এতগুলো ক্যাচ ফেলায় বাংলাদেশ কোচ স্টুয়ার্ট ল কিছুটা বিরক্তও। তিনি স্পষ্টই বললেন, 'এটা ঠিক, সব ক্যাচ কখনও কেউ ধরতে পারে না; কিন্তু এমন কিছু ক্যাচ আছে যেগুলো ধরতে না পারলে চোখে লাগে। তারা যেভাবে ক্যাচ ফেলেছে, সেটা অনুশীলনে হয়। টেস্ট ম্যাচে এমন হয় না। তাদের সবার বয়স এখন কুড়ির মাঝামাঝি। এ বয়সে তো তাদের ফিল্ডিং আরও ভালো হবে। মধ্য তিরিশে থাকা একটি লোক ক্যাচ ধরতে না পারার জন্য অজুহাত দাঁড় করাতে পারে; কিন্তু এরা তা পারে না।'
মিরপুর টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১১৪ রান করেছে। ইনিংস পরাজয় বাঁচানোর জন্য আরও ১৮ রান প্রয়োজন। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান যদি লিড নিতে না পারত তাহলে কি খেলাটা এমন পরিস্থিতিতে গিয়ে দাঁড়াত! ওই সাতটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে পাকিস্তান কি লিড নিতে পারত!

No comments

Powered by Blogger.