চরাচর-ওরাও মানুষ!

বার পৌষের শুরু থেকেই দেশজুড়ে বইতে শুরু করেছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এরই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে শীতের তীব্রতা। বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবন। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্যের হাসি। আর এ দুর্ভোগের নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়েছে ছিন্নমূল, গরিব ও অসহায় মানুষের ওপর। এরই মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস সহ্য করতে না পেরে ১৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায় খবরের কাগজে।


হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের শীত মানেই দুর্ভোগের আরেকটি জীবন। তাদের শীতে পরার মতো কাপড় নেই, শীতের কাঁপুনিতে কোলের ওই অবুঝ শিশুটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো মায়ের কোনো ভাষা জানা নেই। এ যেন বিপন্ন জীবনের আরো কয়েকটি দিন। শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় তাদের। শীতের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ মহিলার ছেঁড়া কাপড়েই চলে শীত নিবারণের প্রাণান্ত চেষ্টা। ভাঙা খুপরি ঘরগুলোর বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢোকা ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়ায় গা কাঁপানো_এ সবই তাদের কপালের লিখন। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের জীবন কাটে রাস্তার পাশে, দোকানের বারান্দায়, শপিং সেন্টারের সামনে ও রেলস্টেশনের ফ্লাটফর্মে। খালি বা ছেঁড়া বস্তা দিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ছে তারা। কিন্তু কেন? ওরাও তো মানুষ। কোথায় সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণই মানবিকতার পরিচয়। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুসংবাদ চোখে পড়লেও শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের খবর এখনো তেমন করে চোখে পড়েনি। তারা চেয়ে আছে, কখন আসবেন সমাজের বিবেকবান মানুষ এক টুকরো গরম কাপড় নিয়ে এবং বিলিয়ে দেবেন সবার মাঝে। এই হাড়কাঁপানো কনকনে শীতে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই তাদের। হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জীবন নিয়ে যারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ সচ্ছলরা অনুভব করবেন_এটাই প্রত্যাশা। এনজিওগুলো এগিয়ে আসতে পারে দুস্থ, অসহায় ও গরিব লোকদের সাহায্যার্থে। আমাদের দেওয়া একটি শীতবস্ত্র থামাতে পারে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে বসে থাকা গরিব মায়ের কোলের অবুঝ শিশুটির কান্না। ছেঁড়া কাপড়ে শীত কাটানো ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার গায়ের শীতের কাঁপুনি। মানুষ মানুষের জন্য, এই মূল্যবোধটুকু জাগ্রত হোক আমাদের সবার মধ্যে। 'মানুষ মানুষের জন্য' এই অমর বাধা আমাদের জাগিয়ে তুলুক মানবতাবোধে।
দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন

No comments

Powered by Blogger.