ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১২-শীতকে কাবু করে গণিতের জয়


নকনে শীতে জবুথবু চারপাশ। সকালের সূর্যের দেখা নেই তখনো। হাড়কাঁপানো শীতকে কাবু করে ওরা আগেই হাজির গণিত জয়ের উৎসবে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো দশম গণিত উৎসব ২০১২-এর আঞ্চলিক পর্বে গতকাল মঙ্গলবার খুলনা ও সিরাজগঞ্জে গণিতের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। তীব্র শীত উপেক্ষা করে উভয় স্থানে উৎসবে যোগ দেয় দুই সহস্রাধিক খুদে গণিতবিদ। খুলনা জিলা স্কুলের মাঠে সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয়


পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মো. জমশের আহাম্মদ খন্দকার। এ সময় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আঞ্চলিক গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খুলনা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুরুল আলম এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শিবেন্দ্র শেখর সিকদার। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গণিতবিদ হারুন অর রশিদ।
জাতীয় সংগীতের পরপরই শিক্ষার্থীরা চলে যায় পরীক্ষার হলে। সেখানে গণিতের পরীক্ষায় অংশ নেয় খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা শেষে শুরু হয় বন্ধুত্ব পর্ব। এ পর্বে ছিল নাচ, গান ও নাটিকা। গণিতের গান শোনান বন্ধুসভার বন্ধুরা। নাচে অংশ নেয় খুদে নৃত্যশিল্পী শাহারিয়া তাবাসসুম।
এর পরই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় এ পর্বে খুলনা জিলা স্কুলের ছাত্র সাইমুমের প্রশ্ন ছিল—ক্যামেরার লেন্স ও মানুষের চোখের মধ্যে পার্থক্য কী? একজন অন্ধ মানুষকে ক্যামেরার লেন্স দেওয়া হলে তিনি কি দেখতে পাবেন? আরেক শিক্ষার্থী জানতে চায়—সাবানের অনেক রং, কিন্তু সাবান থেকে শুধু সাদা ফেনা হয় কেন? শিক্ষার্থীদের এমন মজার প্রশ্নের উত্তর দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকেরা।
এ পর্বে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ, মাদক ও মিথ্যাকে ‘না’ বলা এবং মা, দেশ, বাংলা ভাষা ও জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অঙ্গীকার করানো হয়।
পরে এক মিনিটের আলোচনা পর্বের বক্তব্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিবেন্দ্র শেখর বলেন, বেশি বেশি গণিত ও বিজ্ঞানের চর্চা করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশকে উন্নত দেশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।
এ পর্বে আরও বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সরদার ফিরোজ আহমেদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক রাশেদ তালুকদার, খুলনা সরকারি বিএল কলেজের গণিতের শিক্ষক কে এম রব্বানী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুরুল আলম, প্রথম আলোর খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আবু হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গণিত প্রতিযোগিতায় চারটি গ্রুপে মোট ৬০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সিরাজগঞ্জে সকাল নয়টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম। এ সময় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এস আই আবদুর রাজ্জাক, সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন ও সিরাজগঞ্জ বিএল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফণীন্দ্রনাথ সরকার উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় গণিতের পরীক্ষা। এতে অংশ নেয় সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়ার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৫৫ জন খুদে গণিতবিদ।
পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীরা গণিতবিদদের কাছে জানতে চায়—জ্যামিতি আবিষ্কারের কারণ কী? গরম জিনিস থেকে ধোঁয়া বের হয়, কিন্তু বরফ থেকে ধোঁয়া বের হয় না কেন?
প্রশ্নের উত্তর দেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক জসীম উদ্দীন শেখ, মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, শহিদুল ইসলাম ও আবদুল হাই।
এ পর্বে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের মাদক ও মুখস্থকে ‘না’ বলার শপথ করান।
আলোচনা পর্বে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. সাইদুর রহমান, প্রথম আলোর সিরাজগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক এনামুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ৬০ জনকে নির্বাচিত করা হয় ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য।
আজ বুধবার রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং গোপালগঞ্জ এসএম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.