আশাশুনির মানিকখালী সেতু-ছয় বছরেও নির্মাণ হয়নি মানুষের ভোগান্তি


ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে গত ছয় বছরেও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মানিকখালীর সেতুর কাজ শেষ হয়নি। সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় এ উপজেলার শতাধিক গ্রামে এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। একই কারণে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে গিয়ে এসব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আশাশুনি উপজেলা বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস সানা জানান, আশাশুনি উপজেলাকে খোলপেটুয়া নদী দুই ভাগে বিভক্ত


করেছে। নদীর পূর্বপাড়ে বড়দল, খাজরা. আনুলিয়া ও প্রতাপনগর এই চারটি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক গ্রাম আছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন।
বড়দল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আরও জানান, খোলপেটুয়া নদীর পূর্বপারের চেয়ে পশ্চিমপারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। এ পারে এসে উপজেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প-২ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় খোলপেটুয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণের জন্য নয় কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ পায় এনামুল হক প্রাইভেট লিমিটেড নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ মার্চ কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত তারা কাজ করে।
সওজের সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে সেতুর অসম্পন্ন কাজ শেষ করার জন্য আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঢাকা পিটিসি অ্যান্ড এসটিসিজেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ১৪ জুন থেকে সেতুর কাজ শুরু করে।
সওজের সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম জানান, প্রথম যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছিলেন, তিনি নদীর দুই ধারে ২৪ করে ৪৮টি পিলার নির্মাণ করেছেন। ওই ঠিকাদার ২০০৭ সালে যখন নদীর মধ্যে পিলার নির্মাণ করতে যান, তখন নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। পিলার নির্মাণের জন্য নদীর মধ্যে কেজিং (স্টিলের খাঁচা) করতে গেলে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে।
সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, পরে নকশা শাখা সেতুর স্থান পরিদর্শন শেষে কেজিংয়ের গভীরতা আট ফুট থেকে বাড়িয়ে ১০ ফুট করার পরামর্শ দেন। ২০১১ সালে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের পর কাজ শুরু করলে আবার একই ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়। নদীর মধ্যে কেজিং করতে গেলে নদীর তলদেশের মাটি সরে যায়। এ কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর সওজের সেতু নকশা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী রেহানা হকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল মানিকখালী সেতু এলাকা পরিদর্শন করে। তারা নতুন করে ওই এলাকার নদীর মাটির প্রকৃতি পরীক্ষা না করে সেতু নির্মাণ না করার সুপরিশ করে। এ কারণে নকশা আবার সংশোধন করার জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন না দিলে সেতুর কাজ শুরু করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.