ফিরে দেখা ২০১১-অ্যাথলেটিকসে যত নাটক


দুম করে একটা শব্দ হলো। সবাই স্টার্টিং থেকে দৌড়ও শুরু করল। কিন্তু খানিক বাদে থেমেও গেল। এরপর মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ট্র্যাক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে দেয়ালে মাথা ঠুকলেন কয়েকবার। ততক্ষণ ‘কী হয়েছে, কী হলো’র বিহ্বলতা কাটিয়ে সবাই বুঝে গেছে, ১০০ মিটারের অবিসংবাদিত রাজা ফলস স্টার্ট করে বাদ পড়েছেন তাঁর প্রিয়তম ইভেন্টে! এবার দেগুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এভাবেই বছরের আলোচিত


ঘটনার জন্ম উসাইন বোল্টকে দিয়েই করেছে, একটু অন্যভাবে। বোল্টের অনুপস্থিতিতেও অ্যাথলেটিকসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ইভেন্টের সোনা কিন্তু জ্যামাইকাতেই গেছে। ইয়োহান ব্লেক নামের ২১ বছর বয়সী তরুণ ৯.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে জেতেন সোনা।
তবে হতাশা কিন্তু বোল্ট মুছে ফেলেছেন দ্রুতই। ২০০ মিটারে ১৯.৪০ সেকেন্ড টাইমিং করে সোনা জিতেছেন। রেকর্ড না হলেও এটি ছিল সর্বকালের চতুর্থ সেরা টাইমিং। আসল খেল বোল্ট দেখালেন ৪–১০০ মিটার রিলেতে। নতুন বিশ্ব রেকর্ড (৩৭.০৪ সেকেন্ড) গড়েই সোনা জিতল বোল্ট আর তাঁর দল। এএফপি, ওয়েবসাইট।
এবারের অ্যাথলেটিকস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ যেন নাটকের পসরাই সাজিয়ে বসেছিল। কারণ বোল্টের ফলস স্টার্টের পর হয়েছে রবলেস-নাটক। ১১০ মিটার হার্ডলসের বিশ্ব রেকর্ডধারী ও অলিম্পিক সোনা জেতা ডেরন রবলেসের কাছ থেকে সোনা কেড়ে নেওয়া হয়। লিউ শিয়াংয়ের ট্র্যাকে ঢুকে পড়ে তাঁর গতি রোধ করায় এই শাস্তি পান রবলেস। নতুন করে পদক বিন্যাস করা হয়। তাতে অবশ্য লিউয়ের চেয়ে বেশি ভালো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাসন রিচার্ডসনের। রবলেসের পরে দৌড় শেষ করে রুপা জিতেছিলেন, সেটাই পরে হয়ে যায় সোনা। আর ব্রোঞ্জ জেতা লিউ পান রুপা।
মেয়েদের ট্র্যাকে এ বছর আলো ছড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্যালি পিয়ার্সন। ১০০ মিটার হার্ডলসে চ্যাম্পিয়নশিপ রেকর্ড (১২.২৮ সেকেন্ড) গড়ে সোনা জিতেছেন। ইতিহাসে যেটি চতুর্থ সেরা টাইমিং। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস সংস্থা আইএএএফের বর্ষসেরা নারী অ্যাথলেটের পুরস্কারও জিতেছেন। বর্ষসেরা পুরুষ অ্যাথলেট হয়েছে বোল্ট।
অ্যাথলেটিকস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবার দেখেছে কেনিয়ার উত্থানও। এমনিতে বিচ্ছিন্নভাবে কেনিয়ান অ্যাথলেটরা ভালো করলেও সার্বিকভাবে সাফল্য সেভাবে ছিল না। ২০০৫ চ্যাম্পিয়নশিপে কেনিয়া সোনা জিতেছিল মাত্র একটি, ২০০৭-এ ৫টি, ২০০৯-এ ৪টি। এবার ১২টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সাতটিতেই সোনা জিতে চমকে দিয়েছে কেনিয়া। সম্ভাব্য ৩৬ পদকের ১৭টিই জিতেছে তারা। অবশ্য বরাবরের মতো এবারও পদক তালিকার শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ১০টি সোনাসহ মোট ২২টি পদক জিতেছে তারা।
অ্যাথলেটিকসে যেমন এবার বোল্ট ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন, সাঁতারে তেমনি ছিল মাইকেল ফেল্পেসর দাপট। হঠাৎই হারিয়ে যেতে বসা এই তারকা আবারও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছেন সাংহাইয়ের বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। চারটি সোনা, দুটি রুপা আর একটি ব্রোঞ্জ জিতে ফেল্প্স জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১২ অলিম্পিকের জন্য তিনি প্রস্তুত। কিন্তু ২০১২ অলিম্পিকের জন্য মোটেই আশা জাগাতে পারেননি আরেক সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইয়ান থর্প। প্রায় ছয় বছর পর সাঁতারে ফিরে দেখলেন অনেক পেছনে পড়ে গেছেন। অলিম্পিকের পাঁচ সোনাজয়ী অস্ট্রেলিয়ান সিঙ্গাপুর ওয়ার্ল্ডকাপ মিটে ১০০ মিটার মিডলে ও বাটারফ্লাইয়ে বাদ পড়েছেন হিটেই।
২০০৮ অলিম্পিকে আট-আটটি সোনা জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন এই ‘জলদানব’। এবারও এই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন কি না, কে জানে। তবে বোল্ট ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন, এবার চারটি ইভেন্টে লড়বেন। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪–১০০ মিটারের পাশাপাশি দৌড়াবেন ৪–৪০০ মিটার রিলেতেও। চারটিতেই সোনা জিততে পারলে সেটি হবে ইতিহাসছোঁয়া। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে এক অলিম্পিকে চার সোনা জেতার কীর্তি কার্ল লুইস, জেসি ওয়েন্সদের মতো কীর্তিমানদের। বোল্ট হয়তো সেই অমরত্বের সুধাই পান করতে ব্যাকুল।
২০১১-এর সমাপ্তি কিন্তু ২০১২-এর রোমাঞ্চকর আগমনবার্তাও দিচ্ছে!

No comments

Powered by Blogger.