জোর করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলকে মেনে নেবেন না: জারদারি

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি জোর করে বা ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল মেনে না নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৩৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট জারদারি গত শনিবার এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানালেও এতে যোগ দেননি সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি


করাচিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। করাচিতে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী ফেরদৌস আশিক আওয়ান তাঁর পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে মার্কিন সহায়তা চেয়ে প্রেসিডেন্ট জারদারির ‘গোপন চিঠি’ কেলেঙ্কারির জের ধরে কিছু দিন ধরে সরকার ও সামরিক বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে। সেনাবাহিনী দেশের ক্ষমতা নিচ্ছে বলেও গুজব রটে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানালেন জারদারি।
বাণীতে জারদারি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পালাবদলের জন্য ব্যালটের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনে বিশ্বাসী ছিলেন, বুলেটের মাধ্যমে নয়। আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে, জোর করে বা ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখলকে আমরা সমর্থন করব না।’
জারদারি বলেন, অতীতে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। এর ফলে দেশে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা বিস্তার লাভ করেছে। তাই দেশের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে জনগণের কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হয়।’
পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী গিলানি বলেন, ‘পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনী—তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই আমরা সম্মান করি। আমরা চাই, তিনটি প্রতিষ্ঠানই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে কাজ করুক। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি এবং আমরা চাই না, কোনো প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ুক।’
তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পেশ, পরে প্রত্যাহার: তথ্যমন্ত্রী ফেরদৌস আওয়ান গতকাল করাচিতে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করেন। তবে কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী গিলানির হস্তক্ষেপে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেন তিনি।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। এরপর পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছি। দল ও নেতৃত্বের প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের একপর্যায়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন ফেরদৌস আওয়ান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফেরদৌস আওয়ান প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমার পক্ষে আর মন্ত্রিত্ব চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি আপনার অনুমতি নিয়ে পদত্যাগ করতে চাই।’
পদত্যাগ করতে চাওয়ার কোনো কারণ উল্লেখ করেননি ফেরদৌস আওয়ান। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ‘গোপন চিঠি’ কেলেঙ্কারির জের ধরেই তাঁর ওপর চাপ আসতে পারে।
নৈশভোজে যাননি সেনাপ্রধান: প্রেসিডেন্ট জারদারি চীনের স্টেট কাউন্সিলর ডাই বিঙ্গোউয়োর সম্মানে শনিবার রাতে দেওয়া নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান সেনাপ্রধান কায়ানিকে। কিন্তু তিনি এতে যোগ দেননি। এর আগে বিঙ্গোউয়োর সম্মানে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজেও যোগ দেননি সেনাপ্রধান। চীনের ওই স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁকে আলাদাভাবে সেনা সদর দপ্তরে ডেকে পাঠিয়েছেন কায়ানি।
প্রেসিডেন্টের নৈশভোজে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল খালিদ শামীম ওয়াইনে, বিমানবাহিনীর প্রধান রাও কামার সুলেমান ও নৌবাহিনীর প্রধান আসিফ স্যান্ডিলা যোগ দেন। রয়টার্স, পিটিআই, জিও টিভি।

No comments

Powered by Blogger.