২০১২ by একরামুল হক শামীম

মায়া সভ্যতার মিথ অনুযায়ী ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। পৃথিবী ধ্বংস হওয়া নিয়ে ইনকা সভ্যতার ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে। প্রাক্-কলম্বিয়ান মায়া সভ্যতা মেসোআমেরিকান লং কাউন্ট পঞ্জিকা ব্যবহার করত। সেই পঞ্জিকা অনুযায়ী সময় একটি বৃহৎ চক্র সম্পূর্ণ করে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর এই চক্রের সমাপ্তি ঘটবে। ১৯৬০-এর দশক থেকেই ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে এমন একটি ভবিষ্যদ্বাণী প্রচলিত। মায়া সভ্যতার এই মিথ নিয়ে সিনেমাও


রয়েছে। বড় মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর তলিয়ে যাওয়ার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করা গেছে রোনাল্ড এমরিখ পরিচালিত '২০১২' সিনেমাটিতে। ২০১২ সাল সমাগত। ফলে মায়া ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনাটি সামনে নিয়ে এসেছে দ্য ইকোনমিস্ট। দ্য ইকোনমিস্ট ২০১২ সালকে সামনে রেখে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে, যার নাম 'দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০১২'। এই বিশেষ সংখ্যার সম্পাদক ড্যানিয়েল ফ্রাঙ্কলিন তার সম্পাদকীয় লেখার শুরুতেই মায়া ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১২-তে মায়া ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবী ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে না। তবে অনেক কিছুই ঘটবে ২০১২ সালে।
দ্য ইকোনমিস্ট তাদের বিশেষ সংখ্যায় অনেক কিছুকেই সামনে নিয়ে এসেছে। ২০১১ সালে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জের ২০১২ সালকেও বয়ে বেড়াতে হবে। বিশেষ করে আরব জাগরণ ও 'অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট' ঘরানার আন্দোলনগুলোর জের ২০১২ সালেও দেখা যাবে। ইকোনমিস্ট মনে করছে, আরব জাগরণ ২০১২ সালে সাব সাহারান আফ্রিকাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর হতে যাচ্ছে ২০১২। একই সঙ্গে বছরটিকে সংকটপূর্ণ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে। কারণ, ইউরোজোনের সংকট ক্রমশ জটিল হচ্ছে। ২০১২ সালেও সেই সংকট থাকবে। ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা অনেকেই করছেন।
বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ সংখ্যা 'দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০১২'-এর সম্পাদক ড্যানিয়েল ফ্রাঙ্কলিনের মতে, বিশ্ব নেতারা ২০১২ সালে নিজেদের দেশের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। ফলে রাজনৈতিক নেতাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কম হবে। বিশ্ব রাজনীতির পটপরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে ২০১২ সালে। জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের চারটিতেই ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল ও ৬ মে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। নিকোলা সারকোজি ব্যস্ত থাকবেন তার নিজের দেশের রাজনীতি নিয়ে। বর্তমানে তার জনপ্রিয়তা নড়বড়ে অবস্থায় আছে। ফলে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার ভরাডুবি ঘটবে। চলমান ইউরো সংকটের সমাধানে নিকোলা সারকোজি নেতৃত্বস্থানীয় হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এই কাজ ২০১২ সালে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে। ৪ মে রাশিয়াতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না। ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তন আসছে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। মেদভেদেভ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় ছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কেমন হবেন তা নিয়েই এখন জল্পনা-কল্পনা। ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ফলে ২০১২ সালজুড়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচনের ক্যাম্পেইন নিয়ে। বারাক ওবামা পুনর্নির্বাচিত হয়ে না আসতে পারলে বিশ্ব রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটবে। ২০১২ সালের অক্টোবরে চীনে ক্ষমতাসীন দলের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন আসবে। পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্য দেশ ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দেরি থাকলেও ক্ষমতাসীন জোটের ঐক্য শক্তিশালী নয়। ফলে ২০১২ সাল বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.