তাদের বসবাস এখন আশ্রয়কেন্দ্রে


ট সন্তানের জননী নেয়ারকাহি তুরেই (৩২)। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁর বসবাস। অথচ একসময় ঘরবাড়ি ছিল, ছিল ফুলের মতো সাজানো একটি সংসার। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। ঠেলে দিয়েছে সংগ্রামী এই জীবনে। নেয়ারকাহির যা কিছু সঞ্চয় ছিল তার সবই এখন ব্যয়ের খাতায় চলে গেছে। চলতি বছরের শুরুটা তো তাঁর কেটেছে গাড়িতে গাড়িতেই। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার আগে পাঁচ সন্তান নিয়ে গাড়িতে


গাড়িতেই দিন পার করেছেন তিনি। গৃহহারাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে চাপম্যান পার্টনারশিপ নামের ওই আশ্রয়কেন্দ্রের উপপরিচালক আলফ্রেডো ব্রাউন (৭৩) বলেন, ‘এ রকম দৃশ্য আমাকে প্রতিদিনই দেখতে হয়।’
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি অনেক গৃহহীন শিশু ও তাদের মায়েদের গাড়ি কিংবা পরিত্যক্ত বাড়ি অথবা কোনো পুরোনো বাসে রাতযাপন করতে দেখছি। এটা খুবই দুঃখজনক যে, আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যার অনেক কিছুই রয়েছে, কিন্তু এর অনেক নাগরিকই যৎসামান্য সম্পদের মালিক।’
এ মাসের গোড়ার দিকে ম্যাসাচুসেটসের নিডহাম-ভিত্তিক ন্যাশনাল সেন্টার অন ফ্যামিলি হোমলেসনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ লাখ শিশুর জীবন রাস্তা, আশ্রয়কেন্দ্র, মোটেল অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে কেটেছে, যা ২০০৭ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।
ন্যাশনাল সেন্টার অন ফ্যামিলি হোমলেসনেসের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বাসাক বলেন, মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা ও নারী কর্তৃত্বাধীন চরম দারিদ্র্য পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয়হীন শিশুর সংখ্যা বেড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর এক জরিপে দেশটির দারিদ্র্যতার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য অথবা নিম্ন আয়ের মধ্যে বসবাস করছে। ব্যুরোর হিসাব মতে, চার সদস্যের একটি পরিবারের বাৎসরিক আয় ২৪ হাজার ৩৪৩ ডলারের নিচে হলে তাদের দরিদ্র বলা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়হীন শিশুরা এখন একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। রাস্তায় থেকে থেকে তারা মাদকসেবীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে মাদকনির্ভর হয়ে পড়ছে তারা।
অ্যালেন বাসাক বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের নানা সমস্যা নিয়ে আমরা কথা বলি। আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে কথা বলি। অথচ আজ আমাদের এখানকার অবস্থা কী?’
মার্কিন সরকারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তহবিলের সমালোচনা করে নেয়ারকাহি তুরেই বলেন, ‘কেউ গৃহহীন হলে তার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়। তবে আজ আমি গৃহহীন হয়েছি তার মানে এই নয় যে, গতকাল আমার কিছু ছিল না।’
আটলান্টায় নেয়ারকাহির চারটি ছোট ব্যবসা ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর সব কেড়ে নিয়ে গেছে। গত বছর তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। মা-বাবাও আলাদা হয়েছেন। তাঁদের একজন আটলান্টা ও অন্যজন শিকাগোতে থাকেন।
রাজনীতিবিদদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নেয়ারকাহি বলেন, বেকারত্ব ও বৈষম্য হ্রাসে তাঁরা কিছুই করছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না কেউ এখানে এসে আমাকে অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে বলুক। আমি চাই, তাঁরা (রাজনীতিবিদেরা) এখানে এসে এসব শিশু ও মা-বাবার বাস্তবতা দেখুক।’ রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.