জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ by মুসা আহমেদ


গের কর্মস্থলের ছাড়পত্র ছাড়াই এক কর্মকর্তাকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগে দুর্নীতি হওয়ায় একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ ঝুলে আছে প্রায় এক বছর। ওপরের ঘটনাগুলো রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। অভিযোগ আছে, ‘উপাচার্যের আস্থাভাজন’ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং শিক্ষকের অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঐতিহ্যবাহী শিক্ষায়তনটির সুষ্ঠু কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


নির্বাহী প্রকৌশলী পদে ২০০৯ সালে অস্থায়ী নিয়োগ পান সুকুমার চন্দ্র সাহা। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের হিসাবে গরমিলের অভিযোগে আগের কর্মস্থল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ছাড়পত্র দেয়নি। জগন্নাথের কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাগিদ দিলেও ছাড়পত্র আনতে ব্যর্থ হন সুকুমার। এ কারণে গত বছর প্রায় তিন মাস তাঁর বেতনও আটকে ছিল। রেজিস্ট্রারের দপ্তর জানায়, ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সুকুমার চন্দ্র সাহাকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় নিয়ম ভঙ্গ করে ছাড়পত্র ছাড়াই স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁকে।
সুকুমার চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একটি চক্র’ অন্যায়ভাবে তাঁর ছাড়পত্র আটকে রেখেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আবেদন করেছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য আর ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই।’ তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, তাঁকে প্রশাসন কোনো অনুমতি দেয়নি।
একটি সূত্র জানায়, সুকুমার জগন্নাথে যোগ দেওয়ার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব সেখানকার প্রশাসনকে দিতে পারেননি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একাধিকবার তাঁকে চিঠি দিয়ে হিসাব চান।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ স্থগিত করেছে প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনজন প্রভাষক নিয়োগের জন্য গত ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ১৯ জন উত্তীর্ণ হন। গত অক্টোবরে সাক্ষাৎকারের পর তিনজনের পরিবর্তে চারজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সাক্ষাৎকারে অনুত্তীর্ণ অনেকে অভিযোগ করেছেন, যোগ্যতর প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯ জনের বাইরেও ফেল করা একজনকে সাক্ষাৎকারের কার্ড দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশ পেলে শেষ পর্যন্ত ওই প্রার্থী সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হননি।
জানা গেছে, সিন্ডিকেটের অনুমোদিত ব্যক্তিদের এড়িয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল অদুদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আ ন ম রইসউদ্দীনকে প্রার্থী বাছাই কমিটির বিশেষজ্ঞ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে জানান, বিভাগের সাবেক এক চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা উপাচার্যকে ‘ম্যানেজ করে’ প্রার্থী নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিলেন।
সাবেক বিভাগীয় চেয়ারম্যান আবদুল অদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে, এ জালিয়াতি চক্রের সাথে কে বা কারা যুক্ত ছিল।’
সাক্ষাৎকারে বাদ পড়া প্রার্থীরা গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য একটি আবেদন করেন।
ব্যক্তিগত কাজে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি: উপাচার্যের পিএস জাহিদ আলম ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাইক্রোবাস নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা হলে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনায় জাহিদ আলম নিজেও আহত হন।
উপাচার্যের পিএস জাহিদ আলম প্রথম আলোকে জানান, পরিবহন কমিটির অনুমোদন নিয়েই তিনি ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেন। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি এখন কোথায় কী অবস্থায় আছে, তা-ই জানাতে পারেননি পরিবহন কমিটির আহ্বায়ক নূরুল মোমেন।
উপাচার্য মেসবাহউদ্দিন আহমেদ সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি সুকুমার চন্দ্র সাহার নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার এবং গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে পরিবহন কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় প্রশাসন নিয়োগ স্থগিত করেছে। এখন আবার নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলছে।

No comments

Powered by Blogger.