বেহাল সড়ক-বরিশালের সড়ক সংস্কারে কেবলই আশ্বাস! by সাইফুর রহমান


রিশালের মহাসড়ক এবং সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে বিটুমিন। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এসব সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। এসব সড়ক সংস্কারের দাবিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন কয়েকবার ধর্মঘটের ডাক দিলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জানায়, বরিশালে সওজের আওতায় ৩৬৩ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং


এক হাজার ১৩২ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে। গত ৫ আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৩৮৯ কিলোমিটার সড়ক খুব খারাপ।
বরিশাল শহরের করিমকুটির বাসিন্দা মো. রোকনুজ্জামান সম্প্রতি আলাপকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চললে মনে হয় কোনো খেতের মধ্য দিয়ে গাড়ি চলছে। এইটুকু রাস্তা আসতেই শরীরের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।’
বিভিন্ন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের ভাষ্যমতে, সড়ক সংস্কারের দাবিতে তারা গত ১৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে। একই দাবিতে ২১ আগস্ট প্রতীকী কর্মবিরতি, মানববন্ধন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
গত ২৬ অক্টোবর আবার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘটে নামে। তখন প্রশাসনের মৌখিক আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
গত ৯ ডিসেম্বর বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ওই সব সংগঠন যৌথ সভার মাধ্যমে আবার আন্দোলনের ডাক দেয়। একই দাবিতে তারা ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ কয়েকটি স্থানে মানববন্ধন করে। ওই কর্মসূচি শেষে সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ২০ ডিসেম্বর থেকে বরিশালের সঙ্গে ২৮ পথে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় ওই সংগঠনগুলো।
পরে ওই ধর্মঘট প্রত্যাহারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুসের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সড়ক সংস্কারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকেরা এক মাসের সময় দিয়ে ধর্মঘট তুলে নেন।
বিভাগীয় ও জেলা পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত। এ ছাড়া পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়ক, বাকেরগঞ্জ-বেতাগী-চান্দখালী-বরগুনা আঞ্চলিক মহাসড়ক, বরিশাল-ভোলা লক্ষ্মীপুর জাতীয় সড়ক, গৌরনদী-আগৈলঝাড়া-পয়সারহাট সড়ক, মুলাদী উপজেলার মিরগঞ্জ-মিয়ারহাট, সদর উপজেলার বরিশাল-গোমা সড়ক, ভোলা-চরফ্যাশন-বোরহানউদ্দিন কুঞ্জেরহাট তজুমদ্দিন ও লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা আমড়াগাছিয়া সড়কের অনেকগুলোই যান চলাচলের অনুপযোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের কাশীপুর, জয়শ্রী, মাহিলারা, বাটাজোর ও গৌরনদী এলাকায় সড়কগুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
একই অবস্থা সদর উপজেলার বরিশাল-গোমা সড়কে। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালীর লেবুখালী এলাকা এবং কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা সড়কেও ঝুঁকি নিয়েই চলছে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক।
সওজ জানায়, ২০০৯ সালে বরিশাল বিভাগের সড়ক মেরামতের জন্য ১৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২৭টি সড়কের বিপরীতে ৭৪ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত জুন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কাজ শেষ করতে আরও ৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। হিসাব অনুযায়ী মূল প্রকল্পের কাজ (১৩৭ কোটি টাকা) শেষ করতে বরাদ্দ প্রয়োজন ১০৩ কোটি টাকা। তার বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ছয় কোটি টাকা।
এ ছাড়া বছরের শুরুর দিকে বরিশাল-ভুরঘাটা ৪৮ কিলোমিটার সড়কসহ ২১টি কাজের বিপরীতে ১১০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দরপত্রের ৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দের আদেশ হয়। ওই কার্যাদেশের মাত্র তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই অর্থ পাওয়ার পরই সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের জন্য আমরা এর আগে পাঁচবার ধর্মঘট, স্মারকলিপি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। প্রতিবারই প্রশাসন আশ্বাস দিলেও সড়ক সংস্কার হয়নি। এবারও আশ্বাস দিয়েছে। তাদের প্রতি সম্মান রেখে আগামী এক মাস দেখব। এই সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কার না হলে পুনরায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নামতে বাধ্য হব।’
বরিশাল সওজ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. গুলজার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে জরুরিভিত্তিতে কাজ করতে অতিরিক্ত ৮০ কোটি টাকা প্রয়োজন। যা আমরা দ্রুত পাব বলে আশা করি। বরাদ্দ পেলে আগামী জুনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী হবে।’

No comments

Powered by Blogger.