আবদুর রাজ্জাককে শেষ শ্রদ্ধা-এক কাতারে বিভিন্ন মত-পথের নেতারা

বিভিন্ন মত ও পথের হলেও রাজনৈতিক নেতারা শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রাজ্জাকের অকুণ্ঠ প্রশংসাই করলেন। এক কাতারে দাঁড়িয়েই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। রাজনীতির বাইরের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষও সদ্যপ্রয়াত এ রাজনীতিকের ঘটনাবহুল ৫০ বছরের কর্মময় জীবনকে স্মরণ করলেন।


গতকাল রোববার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে আবদুর রাজ্জাকের মরদেহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। তাঁর স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাক, দুই ছেলে ফাহিম রাজ্জাক ও নাহিন রাজ্জাক লাশের সঙ্গে আসেন।
দুই দফা জানাজা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আবদুর রাজ্জাকের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও আবদুর রাজ্জাককে সম্মান জানানো হয়েছে। আজ সোমবার তাঁর মরদেহ শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর ঢাকার বনানী কবরস্থানে মরদেহ সমাহিত করা হবে।
গতকাল দুটি জানাজাতেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা ও বিশিষ্টজন ছাড়াও বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন। শহীদ মিনারে প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গণমানুষের ঢল নামে।
দুপুর ১২টা ২৩ মিনিটে মরদেহবাহী বিশেষ বিমানটি রানওয়ে স্পর্শ করলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দলের নেতা-কর্মীসহ সবাই। এ সময় বিমানবন্দরের বাইরে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, সমর্থক ও জনতা শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম জানাজা ও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা হয়।
বিমানবন্দর: জাতীয় পতাকায় আবৃত আবদুর রাজ্জাকের কফিনটি বিমান থেকে কাঁধে বহন করে কিছুদূর নিয়ে আসেন তাঁর সহকর্মী নেতারা। এরপর সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রয়াত নেতার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল জলিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা মরদেহ বহন করেন। সেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ ১৪ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনের নেতারা। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর আবদুর রাজ্জাকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গুলশানের বাসায়। গুলশান-২-এর ৭৬ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়িটি তখন লোকে লোকারণ্য। বেলা দেড়টার দিকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা দুজনে রাজ্জাকের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম জানাজা: বেলা পৌনে তিনটায় গুলশান থেকে মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। এখানেই প্রথম জানাজা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় তাঁকে। এর আগে সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সহকর্মীরা মরহুমের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে তাঁদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা এবং স্পিকার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জানাজায় অংশ নেন স্পিকার আবদুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নূর আলম সিদ্দিকীসহ অনেকে।
জাতীয় ঈদগাহ: বিকেল চারটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আবদুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় জানাজায় মানুষের ঢল নামে। এখানে ছুটে এসেছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারপতি, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। জানাজার নামাজ পড়ান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, জাতীয় পার্টির নেতা কাজী জাফর আহমদ ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতারাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে আবদুর রাজ্জাকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের লাখো মানুষ প্রয়াত নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.