চলচ্চিত্র শিল্পে দুরবস্থা-সরকারের একটি বড় দায় রয়েছে

জাতির সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। একটি জাতির আত্মপরিচয় মেলে তার চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। তাই আধুনিক যুগে চলচ্চিত্র দুর্বল হয়ে পড়লে জাতির মধ্যে আত্মপরিচয়ে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হতে পারে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তথা বাংলাদেশ আজ সেই সংকটের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। কাটছে দুঃসময়। ধূসর হয়ে গেছে দেশের অনন্য সৃজনশীল চলচ্চিত্র শিল্প। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রমরমা প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম


হয়েছে। চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এফডিসি) বছরের পর বছর ধরে বড় অঙ্কের টাকা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পে মন্দার কারণে। এই অস্থিরতার মধ্যেই ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে সৌভাগ্যবশত তা আবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে কারণগুলো কী তা খুঁজে দেখতে চেষ্টা করা হয়েছে কালের কণ্ঠের এক আয়োজনে। অনেকেই মনে করছেন, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন, প্রেক্ষাগৃহগুলোর অব্যবস্থা, ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক বিকাশ না হওয়া, সেন্সর বোর্ড ও এফডিসিতে বিদ্যমান অনিয়ম এ শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। সুতরাং এখনই এসব সমস্যার সমাধান না করলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলা তো যাবেই না বরং ভিন্ন দেশের আগ্রাসনে পড়ে দেশের সংস্কৃতি এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় পতিত হবে।
এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন সেটি হলো শিক্ষিত ও সৃজনশীল মানুষদের সম্পৃক্ত হতে হবে। সত্যিকার নান্দনিক ছবি উপহার দিতে হবে দর্শকদের। দেশে একসময় এমন নান্দনিক ছবি তৈরি হয়েছে এবং দর্শকরা অবলীলায় প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেসব ছবি উপভোগ করেছেন। এখন একদিকে যেমন সে ধরনের মানসম্মত ছবির পরিমাণ কম, অন্যদিকে সিনেমা উপভোগের পরিবেশ নেই প্রেক্ষাগৃহে। লক্ষণীয়, এখনো দুই-একটি ভালো ছবি হলে তাতে দর্শকের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ দুটো ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এগিয়ে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অনেক এগিয়েছে। চলচ্চিত্রের বিশ্ববাজার তারা একরকম দখল করে নিয়েছে। এখন এই ভারতীয় চলচ্চিত্রের পাশাপাশি হাঁটতে হলে সর্বপ্রথম প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে। কারণ এ শিল্পে প্রযুক্তিগত মান একটি অপরিহার্য বিষয়। আমরা সরকারকে বলব, এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে সুস্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পী-কলাকুশলীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের বাণিজ্যের সঙ্গে সৃজনশীলতার দিকে জোর নজর রাখতে হবে। তা না হলে সৃজনশীলতা যেমন থাকবে না, তেমনি থাকবে না বাণিজ্য, যা ইতিমধ্যেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.