বামন গাড়ি!

গাড়ি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। উদ্ভাবন করা হচ্ছে নতুন সব তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি। সম্প্রতি উদ্ভাবন করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গাড়ি। চমক লাগানো তথ্য হচ্ছে, এ গাড়ির আয়তন মাত্র এক ন্যানোমিটার। ব্যাপারটা হয়ত ঠাহর করতে পারছেন না, তাই তো? কিন্তু ন্যানোমিটার সম্বন্ধে যাদের ধারণা আছে, তারাই শুধু বুঝতে পারছেন এটা কত বড় বিস্ময়। ন্যানোমিটার হচ্ছে এক মিটারের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। আর তাই এ এক


ন্যানোমিটার আয়তনের গাড়ি তৈরির ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। শুধু তা-ই নয়, মাত্র একটি মলিকিউল দিয়ে তৈরি হয়েছে এ গাড়িটি! এটা আবার চলবে বিদ্যুতের শক্তিতে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের গ্রনিংগেন ইউনিভার্সিটির অর্গানিক কেমিস্ট্রির অধ্যাপক বেন ফেরিঙ্গা এ গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন। গ্রিক 'ন্যানো' শব্দের অর্থ বামন। তবে ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও এর কার্যপদ্ধতি অন্য বিদ্যুৎচালিত গাড়ি থেকে কোনো অংশে কম নয়। বিজ্ঞানী বেন ফেরিঙ্গা বলেন, দশটি হাইড্রোজেন পরমাণু পরপর রাখলে তা হয় এক ন্যানোমিটারের সমান। এটি খালি চোখে দেখা যায় না। ন্যানো স্কেলে তৈরি যে কোনো জিনিসই খুব ছোট। আর তাই তাদের চেষ্টা ছিল এমন একটি মোটর তৈরি করা, যা ছোট হলেও অংশগুলো হবে বেশি কার্যকর এবং সংবেদনশীল। গাড়িটি চার-চাকাবিশিষ্ট। চারটি মলিকিউলার মোটরকে চারটি চাকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে চারটি চাকাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি চালাতে বাইরের কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই। সত্যিকার অর্থে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ অটোমেটিক গাড়ি। মজার ব্যাপার হলো, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা থাকলে গাড়িটি নিজে থেকেই চলতে পারবে।
আকারে অতি ছোট হওয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স, আলোকবিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানো প্রযুক্তি। ফেরিঙ্গার মতে, এখন থেকে ক্ষুদ্র প্রযুক্তিই দেবে শক্তির বড় সমাধান। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তামার একটি পাতের ওপর গাড়িটি প্রায় ছয় ন্যানোমিটার দূরত্ব নিজে থেকেই অতিক্রম করেছে। নিখুঁত সরলরেখায় এটি সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। অবশ্য গাড়িটি চলা শিখলেও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় চাকাগুলো এখনও একসঙ্গে এগিয়ে যেতে শেখেনি। বিজ্ঞানীরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবশ্য এরপরও বিজ্ঞানীরা এ গবেষণাকে সফল বলেই মন্তব্য করেছেন। কারণ, ন্যানো প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভতিষ্যতে সেলফোন, ল্যাপটপ, বৈদ্যুতিক গাড়িসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য দ্রুত চার্জ করা সম্ভব। চার্জ করার সময় এসব জিনিসের সামনেও উপস্থিত থাকতে হবে না। পুরো কাজটাই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সত্যি, কী এক অসাধারণ প্রযুক্তিই না অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!
প্রদীপ সাহা

No comments

Powered by Blogger.