বাইরের সঙ্গে লেনদেনে বড় অঙ্কের ঘাটতি

হির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন অনেক প্রতিকূল অবস্থায় চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি থাকার আশঙ্কা করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান


পরিসংখ্যান ওই আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি মাসে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি হয়েছে ৩১০ কোটি মার্কিন ডলার। এ সময়ে পণ্য ও সেবা আমদানি উভয়ই বেড়েছে ব্যাপক হারে। আমদানি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে রফতানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। সেবা খাতেও বাংলাদেশ প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে। সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশকে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে সে তুলনায় পেয়েছে খুবই কম অর্থ। এখানে বাংলাদেশ ১০৫ কোটি ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে। গত অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর সময়ে এ খাতে ৬৫ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। চলতি স্থানান্তর খাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে, তবে তা বিশাল অঙ্কের পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের ঘাটতি পূরণে যথাযথ হয়নি। এ কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ১১২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। আর্থিক হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থা অনুকূলে রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণে আর্থিক হিসাবে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে ৩২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ডলার।
প্রসঙ্গত, গেল অর্থবছরে (২০১০-১১) ব্যাপক আমদানি সত্ত্বেও দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এবার অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি হতে পারে। বৈদেশিক লেনদেনের সামগ্রিক ভারসাম্যেও ঘাটতি দিয়ে শেষ হতে পারে অর্থবছর। এর কারণ, রফতানিতে গেল বারের মতো বাম্পার প্রবৃদ্ধি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গেল অর্থবছরে ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিপরীতে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অনুমান করা হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাইরের চাকরিবাজারে অভিবাসী শ্রমিকের চাহিদার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই। এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্সেও বড় প্রবৃদ্ধি হবে না বলে অনুমান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছে মাত্র ৫ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে চলতি স্থানান্তর হিসাবে (এর প্রায় সবই রেমিট্যান্স) ১২৬০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত থাকার অনুমান করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে প্রক্ষেপিত ঘাটতি ৮৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গেল অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের কয়েকটি অর্থবছরে চলতি হিসাবে বেশ বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত ছিল। অর্থবছর শেষে সামগ্রিক ভারসাম্যে ৪৪ কোটি ডলারের ঘাটতি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য তার মুদ্রানীতি বিবৃতিতে বলেছে, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর এই প্রক্ষেপণ ট্রেন্ড বা প্রবণতা নির্ভর। সঠিক নীতি সহায়তার মাধ্যমে রফতানি ও রেমিট্যান্স এবং বিদেশি পুঁজির অন্তঃপ্রবাহ উৎসাহিত করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজেমী জানান, রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পরিমিত মাত্রায় হতে পারে_ এমন ধারণার ভিত্তিতে এই প্রক্ষেপণ। তবে চলতি হিসাবে ঘাটতি মানেই তা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক মনে করার কারণ নেই। ভারতে গত কয়েক বছর ধরে চলতি হিসাবে ঘাটতি হচ্ছে। অনেক সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়লে আমদানি বেড়ে যাওয়ার সূত্রে চলতি হিসাবে চাপ বাড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.