অজানা জেমস বন্ড by রাজীব হাসান

এই পৃথিবী বুড়িয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ওজন আর বয়স দুটোই বাড়ছে। সূর্যটাও নাকি নিভে যাবে একদিন। কিন্তু একরত্তি বয়স বাড়েনি তাঁর। জেমস বন্ড আজও আমাদের কাছে চিরতারুণ্যের মূর্ত প্রতীক। অথচ দেখতে দেখতে বেলা অনেক বাড়ল।


১৯৬২ সালের ৫ অক্টোবর প্রথম মুক্তি পেয়েছিল বন্ড সিরিজের ছবি। ছবির নাম ড. নো। আর আমাদের বাসায় দেয়ালে এখন ২০১২-এর অক্টোবর ঝুলছে। পাক্কা ৫০ বছর হয়ে গেল জেমস বন্ডের ছবির। হাফ সেঞ্চুরি!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ইয়ান ফ্লেমিং যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর গোয়েন্দা শাখায় কাজ করছিলেন, সে সময়ই এক বন্ধুকে বলেছিলেন, তিনি এমন একটা কিছু লেখার পরিকল্পনা করেছেন, যেটা হবে ‘মাদার অব অল স্পাই স্টোরিজ।’ ফ্লেমিং যে সফল হয়েছেন, এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার লোক এই ধরাধামে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আসুন, বন্ডের কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আমরাও বন্ডগিরি মানে স্পায়িং করি!
জেমস বন্ড একজন পুরোদস্তুর নিখাদ ব্রিটিশ। যারা বন্ডের কোনো ছবি দেখেনি, তাদের কাছেও এ তথ্য অজানা নয়। কিন্তু জানেন কি, পর্দায় হাজির হওয়া প্রথম বন্ড ছিল আমেরিকান! ১৯৫৪ সালে সিএসবি মাত্র ১ হাজার ডলার দিয়েছিল ফ্লেমিংকে, তিনি যেন তাঁর উপন্যাস ক্যাসিনো রয়্যালকে তাদের ক্লাইম্যাক্স সিরিজের জন্য এক ঘণ্টার একটা নাটকে রূপদান করেন। মার্কিন অভিনেতা ব্যারি নেলসন ‘জিমি’ বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেন, যে বন্ড সিআইএর এজেন্ট! বন্ডের বন্ধু ফেলিক্স লেইটারেরও অদলবদল হয়। আসল উপন্যাসে লেইটার সিআইএর লোক। কিন্তু ওই নাটকে ক্লারেন্স লেইটারকে দেখানো হয় ব্রিটিশ!
১৯৭১ সালে বন্ড সিরিজের শেষ ছবি করেছিলেন শন কনোরি। আর কখনো তাঁকে বন্ডের ভূমিকায় দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘নেভার এগেইন’। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পেল বন্ডেরই আরেকটি ছবি। অভিনেতা? কনোরি! ছবির নাম? নেভার সে নেভার এগেইন! এই ছবি অবশ্য বন্ড চলচ্চিত্রের স্বত্বাধিকারী এয়ন প্রোডাকশনস বানায়নি, বানিয়েছে অন্য কেউ। ড. নো দিয়ে বন্ড ছবির যুগ শুরুর আগেই অন্য এক প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করেছিলেন ফ্লেমিং। এ নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। আদালতের রায়ে জিতে ‘আনঅথোরাইডজ’ বন্ড ছবি বানান আরভিন কার্শনার। কনোরির বয়স তখন ৫২। ছবিতেও তাই বুড়ো বন্ডকেই দেখানো হয়!
বন্ডের উপন্যাসগুলোতে তাঁকে দেদার সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকাতে দেখা যায়। দিনে সত্তরটা সিগারেটও হজম করে ফেলতে পারেন বন্ড। অবশ্য প্রথম দিককার ছবিতে কনোরি তেমন একটা সিগারেট ফোঁকেননি। মাঝেমধ্যে সিগারেট ধরাতে দেখা গেছে তাঁকে। রজার মুর যখন বন্ডের মুকুট পেলেন, শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলেন কনোরির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার। তিনি এমন কিছু করতে চেয়েছেন, তাঁর বন্ড যেন কনোরির বন্ড না হয়। না, তিনিও সিগারেট টানেননি, তবে বেছে নিলেন চুরুট! প্রযোজকের সঙ্গে নাকি তাঁর চুক্তিই হয়েছিল, সেটে অনিঃশেষ চুরুটের জোগান দিতে হবে।
এখনো বন্ড ভক্তদের একটা বড় অংশ মনে করে, উপন্যাস পড়ে পাঠকের মনে বন্ডের যে ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিল, বন্ড অভিনেতাদের মধ্যে এর সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলেন জর্জ লাজেনবি। কনোরি প্রথম দফায় সরে দাঁড়ানোর পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া মডেলটাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল বন্ডের চরিত্রে। কিন্তু অস্ট্রেলীয় ইংরেজি উচ্চারণ আর শুটিংয়ের সময় পরিচালক পিটার হান্টের সঙ্গে ঝামেলা বাধিয়ে ক্যারিয়ারের ১১টা বাজান লাজেনবি। ১২টা বেজে যায় প্রযোজককে চটিয়ে। আর কোনো বন্ড ছবি করা হয়নি তাঁর।
আপনারা কি জানেন, জেমস বন্ড জুনিয়রও আছে! না, বন্ডের কোনো সন্তান সে নয়। সে আসলে বন্ডের ভাতিজা।

No comments

Powered by Blogger.