শিক্ষামন্ত্রীর পিয়ন আলী গ্রেপ্তার

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পিয়ন মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে মগবাজার থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে আনা হয়। মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির সভাপতি।


২০০৯ সাল থেকে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে পিয়ন হিসেবে কর্মরত।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বলেছিলেন, তাঁর মন্ত্রণালয়ে কোনো ঘুষখোরের জায়গা হবে না।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনেক বিষয় লুকিয়ে রাখা হতো। যথারীতি গতকাল বৃহস্পতিবারও মোহাম্মদ আলীর গ্রেপ্তারের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা দিনভর করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সফরে রয়েছেন। তাঁর তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কিছু জানেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর পিয়নকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যখন বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। বিজি প্রেসে কয়েকজন লোকের চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার নামে মোহাম্মদ আলী লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সে কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা বলছেন, রিমান্ডে তাঁকে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
জানা গেছে, মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চাকরি দেওয়া, চাকরি স্থায়ী করা, বদলিসহ নানা কাজের কথা বলে গত চার বছরে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সর্বশেষ বিজি প্রেসের ২২ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে তারা একজন উপদেষ্টার সই জাল করে একটি চিঠিও দেখান কর্মচারীদের। কিন্তু তাঁদের চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় তেজগাঁও পলিটেকনিকের সামনে কয়েকজন তাঁকে কয়েক দিন আগে আটক করেন। এ সময় মোহাম্মদ আলী চাকরি স্থায়ী করে দেওয়ার দিন-তারিখ ঠিক করে মুচলেকা দেন।
কিন্তু তার পরও চাকরি হয়নি। এর পরেই ঘুষদাতারা সরকারের প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে জানান, 'আপনার নাম করে টাকা নিয়েছে কিন্তু চাকরি স্থায়ী হয়নি।' এর পরেই মগবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির অফিস থেকে গ্রেপ্তার হন মোহাম্মদ আলী। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গত ৪ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার বিজি প্রেসের কর্মচারী হারুন অর রশীদ। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, মোহাম্মদ আলীর নামে বিভিন্ন থানায় প্রতারণার অভিযোগে প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে।
তেজগাঁও থানার ওসি গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ার জন্য মগবাজার থেকে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে একদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। বিজি প্রেসের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারী সমিতির একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কর্মচারী সমিতির মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত প্রায় ১০ জন পিয়ন ওই সিন্ডিকেটে রয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। তিনি বলেন, আমার সন্দেহ হচ্ছে, ওরা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কাহিনী বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে মোহাম্মদ আলী তাঁর মেয়ের বিয়েতে ধানমণ্ডির ২৭ নম্বরের হোয়াইট হল সেন্টারে প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করেন। নামিদামি লোকদের দাওয়াতও করা হয় বিয়েতে।

No comments

Powered by Blogger.