সিরীয় বিমান জোর করে নামাল তুরস্ক

'অবৈধ সরঞ্জাম' বহনের অভিযোগে সিরিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমানকে গত বুধবার আঙ্কারায় জরুরি অবতরণে বাধ্য করে তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী। বিমানটি রাশিয়া থেকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দিকে যাচ্ছিল। সন্দেহজনক মালামাল জব্দ এবং প্রায় ৯ ঘণ্টা আটকে রাখার পর বিমানটিকে ছেড়ে দেয় তুর্কি কর্তৃপক্ষ।


এ ঘটনায় তুরস্কের আচরণকে 'আক্রমণাত্মক' বলে উল্লেখ করেছে সিরিয়া। মালামাল জব্দ ও বিমান আটকে রাখার ঘটনায় তারা ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে। তুরস্কের কাছে জোরপূর্বক বিমান অবতরণের ব্যাখ্যা দাবি করেছে রাশিয়া।
সিরিয়ার যাত্রীবাহী এয়ারবাস এ-৩২০-কে বুধবার বিকেলে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দরে জোর করে অবতরণ করানো হয়। আকাশে থাকতেই তুরস্কের দুটি জেট বিমান পাশ থেকে ঘিরে ফেলে অবতরণে বাধ্য করে ওই বিমানটিকে। সিরিয়া যাত্রীবাহী বিমানে সামরিক সরঞ্জাম থাকতে পারে_গোয়েন্দা সূত্রে এ ধরনের খবর পাওয়ার পরই তুরস্ক বিমানটিকে নামিয়ে আনে।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাতোলিয়া জানায়, মস্কো থেকে আসা ১৮০ জনের বহনক্ষমতাসম্পন্ন সিরীয় বিমানটিতে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। আরোহীদের ১৭ জনই ছিল রুশ নাগরিক। ৯ ঘণ্টা আটক রাখার পর বুধবার মধ্যরাতে বিমানটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সিরীয় সীমান্ত থেকে ছোড়া মর্টারের আঘাতে পাঁচ বেসামরিক তুর্কির মৃত্যুর পর থেকেই গত এক সপ্তাহ ধরে সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সিরিয়ার হামলার জবাবে তুরস্কও সিরিয়া সীমান্ত লক্ষ্য করে মর্টার ছুড়েছে। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর গত দেড় বছরের মধ্যে এটাই সেখানে তুরস্কের প্রথম হামলা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু জানান, সিরিয়ার বিমান থেকে তাঁরা 'আপত্তিকর' মালামাল জব্দ করেছেন। বিমানটি অস্ত্র বহন করছিল বলে প্রথমে সন্দেহ করা হয়। তবে জব্দ করা সরঞ্জাম ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ বা যোগাযোগের সরঞ্জাম হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো। জব্দকৃত সরঞ্জাম প্রাণঘাতী নয় বলেও দাবি করেছে তারা। তবে তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানানো হয়নি। দাভুতোগলু কেবল বলেছেন, 'বেসামরিক জনগণের ওপর নাশকতা চালাচ্ছে, এমন একটি সরকারকে অস্ত্র সরবরাহে বাধা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে এ ধরনের সরবরাহ একেবারেই মেনে নেওয়া হবে না।' সন্দেহজনক সরঞ্জাম পরিবহন করছে, এমন যেকোনো বিমানের ওপর তদন্ত চালানোর অধিকার তুরস্কের আছে বলেও জানান তিনি। জোরপূর্বক অবতরণের প্রতিশোধ নিতে সিরিয়াও তুরস্কের বিমানগুলোর সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করতে পারে বলে তুর্কি এয়ারলাইনগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে সরকার।
তুর্কি কর্তৃপক্ষের আচরণকে 'আক্রমণাত্মক' উল্লেখ করে সিরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন দাবি করেছে, তাদের বিমানটি পুরোপুরিই বৈধ সরঞ্জাম বহন করছিল। সিরিয়ান এয়ারের পরিচালক আইদা আবদেল লতিফ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, 'তুরস্কের সামরিক বিমানগুলো আমাদের পাইলটকে আগে থেকে সতর্ক না করেই অবতরণে বাধ্য করে। সামরিক বিমানগুলো এতই কাছে চলে এসেছিল যে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত।'
এদিকে আঙ্কারায় নিয়োজিত রাশিয়ান দূতাবাস তুরস্ক সরকারের কাছে সিরীয় বিমানের অবতরণে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। জরুরি অবতরণ রাশিয়ার নাগরিকদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করে তারা। সিরীয় বিমানে কোনো অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম ছিল না বলেও দাবি করে রুশ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত লাখদার ব্রাহিমি সিরিয়া বিষয়ে আলোচনার জন্য গতকাল সৌদি আরবে পেঁৗছান। সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরীয় সংকট নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করবেন। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.