সাংবাদিক দম্পতি হত্যা- সাতজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে কারণে

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্কযুক্ত মনে হওয়ায় র‌্যাব সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ কথা বলেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে আইনসংগতভাবে সাতজনকেই প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


এর আগে এই মামলায় কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। সাধারণত একটি অপরাধের ঘটনা ঘটলে, বিশেষ করে খুনের ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেককেই সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। কাউকে নোটিশ দিয়ে ডেকে এনে আইনিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। কিন্তু নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের কয়েক দিনের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।
র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার সাতজন ও পুরস্কারঘোষিত পলাতক একজনের মধ্যে স্পষ্টত তিনটি পক্ষ রয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন পেশাদার খুনি, দুজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন রুনির বন্ধু। কিছু তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে এঁদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এমনও হতে পারে, এঁদের কেউই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
পাঁচ অপরাধীর যোগসূত্র: রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ—এই পাঁচজন পেশাদার অপরাধী চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি। নারায়ণ হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব সর্বপ্রথম কামাল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল। এই কামালের সঙ্গে ডাকাতি করা মালামালের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বকুলের ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল। কামাল নারায়ণ হত্যা মামলায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই র‌্যাব পরে রফিকুল, বকুল, সাঈদ ও কামরুলকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, কামালের বাসা সাগর-রুনির বাসার ২০০ গজের মধ্যে। একই এলাকায় বাসা রফিকুল ও বকুল মিয়ার। এই পাঁচজন পেশাদার ছিনতাইকারী, গ্রিলকাটা চোর ও খুনি।
হুমায়ুন যোগসূত্র: র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন সম্পর্কে র‌্যাব খোঁজ নিয়ে জেনেছে, হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১০ দিন আগে তিনি ওই বাড়িতে কাজে যোগ দেন। ঘটনার দিন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে হুমায়ুনের সাক্ষাৎকারের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কর্মকর্তারা তাঁর কথার মধ্যে কিছু ভিন্নতা খুঁজে পান। যেমন, এনটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের শুরুতে হুমায়ুন বলেছেন, তিনি ওই বাড়িতে নতুন। সাগর-রুনির চেহারা চিনতেন না। আবার একই সাক্ষাৎকারের শেষে একটি প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন বলেন, তিনি সকালে ওই বাড়িতে নতুন কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখেননি।
পলাশ যোগসূত্র: র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত পলাশের দায়িত্ব ছিল। ভোরে ভবনের সাগর-রুনির ঠিক নিচতলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মো. নুরুন্নবী পুরুষকণ্ঠের কান্না ও গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেয়ে ইন্টারকমে ফোন করে পলাশকে বিষয়টি দেখতে বলেন। হুমায়ুনকে ফটকে রেখে পলাশ ভবনের ওপরের তলাগুলো ঘুরে এসে নুরুন্নবীকে জানান, তাঁদের ভবনে নয়, পাশের ভবন থেকে আওয়াজ আসতে পারে। এরপর পলাশ নিচে নেমে দেখেন, দরজার তালা খোলা। ধারণা করা হচ্ছে, পলাশের ওপরে যাওয়ার সুযোগে হুমায়ুন দরজার তালা খুলে কাউকে বের করে দিয়েছেন।
তানভীর যোগসূত্র: র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, তানভীরের সঙ্গে ২০১০ সালে ফেসবুকে রুনির যোগাযোগ হয়। তখন সাগর-রুনি জার্মানিতে ছিলেন। তানভীরের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ প্রায় দুমাস আটকে রেখে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় র‌্যাব তাঁদের কথোপকথন উদ্ধার করে। এসব বিশ্লেষণ করে র‌্যাবের ধারণা হয়েছে, তানভীর রুনির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কল তালিকা বিশ্লেষণ করে কর্মকর্তারা বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি খুন হওয়ার আগে রাত সাড়ে ১২টায়ও তাঁদের মধ্যে কথা হয় এবং ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটা ১০ মিনিটে রুনির মোবাইল ফোন থেকে তানভীরের মোবাইলে আট সেকেন্ডের একটি কল করা হয়। তানভীরের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে র‌্যাবের মনে হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.