বেসামাল ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রণের দায় ক্ষমতাসীনদের

আবার আলোচনায় ছাত্রলীগ। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র ছাত্রলীগকর্মীরা প্রশাসনের সামনেই চড়াও হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। চুয়েট বন্ধ হয়ে গেছে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হলেও সে নিষেধাজ্ঞা ছাত্রলীগের জন্য প্রযোজ্য নয়। ক্ষমতা বেসামাল করে ফেলছে ছাত্রলীগকে। সামলানোর দায় যেন কারো নয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানেই গোলযোগ, সেখানেই অসুস্থ ছাত্ররাজনীতি। রাজনৈতিক দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে তো বটেই, রাজনীতির বাইরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে শিক্ষাঙ্গনে অসন্তোষ বাড়ছে। সংঘর্ষ এখন যেন নৈমিত্তিক একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠুনকো কোনো কারণে সৃষ্ট সংঘর্ষে রামদা, চাপাতির মতো অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহৃত হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র, নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজট। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন সব সময়ই ক্যাম্পাসে নিজেদের শক্তির মহড়া দেয়। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। বর্তমান সরকারের সময়েও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলছে 'ছাত্রলীগ-রাজ'। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও ক্ষেত্রবিশেষে অসহায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রভাব এখনো আগের মতোই। শুধু বদলে গেছে রাজনৈতিক পরিচয়। কোথাও কোথাও আগের অনেক পান্ডাকে দেখা যায় রাজনীতির রং বদলের খেলায় নিজেদের চেহারা বদলে ফেলতে। ছাত্ররাজনীতি আজ এই নীতিহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো সুযোগ যেন এখন আর হাতে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা তরুণদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র। প্রবল প্রতিযোগিতায় টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর আবাসিক হলে সিট পাওয়ার যোগ্যতা যখন হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক আনুগত্য, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নৈতিক অবস্থান তখন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? যখন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অন্য ছাত্র সংগঠনকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে সুরক্ষা দিতে ব্যস্ত, তখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যেমনটি হয়েছে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের 'শিক্ষা দেওয়া'র দায়িত্ব ছাত্রলীগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও পালন করছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সামনেই ছাত্রলীগ আক্রমণ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। আবার এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাজশাহীতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। যেখানে কয়েক দিন আগেই পুলিশের সামনে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে ছাত্রলীগ, সেখানেই ছাত্রজোটের মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। নির্বিচারে পিটিয়েছে ছাত্রজোটের ছাত্রদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সাল থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও তা নাকি ছাত্রলীগের জন্য প্রযোজ্য নয়। অন্য সব সংগঠন তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলেও ছাত্রলীগ সেখানে সক্রিয়। আর সারা দেশের চিত্র এই যে, যেখানে ছাত্রলীগ সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা বাণিজ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদ-সংঘর্ষ।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ, এর দায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর অনেকটাই বর্তায়। কাজেই ক্ষমতার শীর্ষ থেকে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে হবে, না হলে লাগামহীন ছাত্রলীগ তার মুরবি্ব সংগঠনের জন্যই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমরা আশা করব, লাগাম টানার কাজটি অবিলম্বে নির্দ্বিধায় করবে ক্ষমতাসীন মহল।

No comments

Powered by Blogger.