ঝড়ের আঘাতে ২৭ মৃত্যু-ভোলা নোয়াখালী সন্দ্বীপে নিখোঁজ পাঁচ শতাধিক জেলে

আকস্মিক ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে উপকূলের কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। প্রাণ হারিয়েছে তাৎক্ষণিক হিসাবে অন্তত ২৭ জন। উপকূলীয় জলসীমায় নিখোঁজ রয়েছেন আরো কয়েক শ মাঝি, যাঁদের মধ্যে অনেকেরই প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।


নিহতদের মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৮ জন, ভোলায় পাঁচজন এবং সন্দ্বীপে চারজন রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঝড় আঘাত হানে।
ভোলার মেঘনাপারে এখন চলছে স্বজনহারাদের সন্ধান আর না পাওয়ার বিলাপ। 'আমার স্বামীরে বুজি হারায়া ফালাইছি। আমার বাজানেরে বুজি গাঙের দমায় মাইর‌্যা হালায়ছে। ওরে আল্লাহ, এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ নাইরে। তোরা কে আছোস, আমার স্বামী আর পোলারে আইন্যা দে।' এভাবেই হাজিরহাট ইউনিয়নের মেঘনা নদীর মাছঘাটে বসে বিলাপ করছিলেন মিনারা বিবি স্বামী ও সন্তানের জন্য। তিনি জানান, বুধবার রাতে তাঁর স্বামী শাহ আলম ও ছেলে ইসমাইল নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। একইভাবে এলাকার বাসিন্দা করিম মাঝি, হাসনুর বেগম, ইসয়াসনুর, কাজল মাঝি ও ইয়ার আলী মাঝিকে নিখোঁজ স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় ঘাটে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
ভোলায় তিন শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা যায়।
একইভাবে নোয়াখালীর হাতিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৫০টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
লাশ আর লাশ : রাত তিনটার পর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, সুবর্ণ চর, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় এ ঝড় আঘাত হানে। এতে শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়। আরো চারটি লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহিদুর রহমান জানান, রাত ৩টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঝড়ের আঘাতে হাতিয়ার সাতটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। নিহতরা হলো বুড়ির চর ইউনিয়নের খুকি আক্তার (৪), জাহাজমারা ইউনিয়নের চর হেয়ার গ্রামের নাজিম উদ্দিনের মেয়ে সীমা আক্তার (১২) ও ছেলে মামুন উদ্দিন (৮), চর কিং ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের বজেন্দ্র কুমার দাসের স্ত্রী রাজেশ্বী বালা দাস (৪৫), তমরুদ্দি ইউনিয়নের জেলে ব্রজ লাল মাঝি (৫৫) ও নলচিরা ইউনিয়নের আরিফ (৭) নিহত হয়।
এ ছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন হাতিয়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাসমত আলীর স্ত্রী মরজা খাতুন (৬০), বিরবিরি এলাকার মোহছেনা খাতুন (৬০) ও বাকের হোসেন (৩০) এবং গামছাখালী গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (২) ও বেলাল হোসেন (২৫)। এ ছাড়া সুবর্ণ চরে নদীতে আরো চারজনের লাশ পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাতিয়ায় আটজনের প্রাণহানির খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি মোট মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কার কথা জানান।
সুবর্ণ চর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ মেহেদী হাসান জানান, ঝড়ে ঘরচাপা পড়ে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরকনক গ্রামের জসিম উদ্দিনের মেয়ে শারমিন আক্তার (১১) ও একই বাড়ির হাবিবুর রহমানের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬০) মারা গেছেন। ঘরচাপা পড়ে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে বামনীয়া নদী থেকে একটি মাছ ধরা ট্রলার নিখোঁজ হয়। এতে ১০-১২ জন জেলে ছিলেন। ঝড়ের পর উপজেলার চর এলাহীর গাংচিল-সংলগ্ন বামনী নদী থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন চর এলাহী ইউনিয়নের গাংচিল গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে আমির হোসেন (৩৭), একই গ্রামের জামাল মাঝির ছেলে বাবুল মিয়া (২০), নুরুল আলমের ছেলে নুর ইসলাম (৪৫) ও রিয়াজ (২৪)। লাশগুলো উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ট্রলারের বাকি জেলেরা নিখোঁজ রয়েছেন বলে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, 'কোনো আবহাওয়া পূর্বাভাস না থাকায় সাগর ও নদীতে অবস্থানরত জেলেদের নিখোঁজ ও হতাহতের আশঙ্কা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে আটজনের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।' তিনি আরো বলেন, 'আমাদের কোথাও যাওয়ার মতো অবস্থা নেই, পুরো হাতিয়ার রাস্তাঘাট গাছপালা পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা পরিষ্কারের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। পুরো দ্বীপটাই একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।'
নিহতদের কেউ ঘরচাপা পড়ে, কেউবা পানিতে ডুবে মারা যায়।
ভোলায় আহাজারি : ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা ও চরফ্যাশনে ঝড়ের সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ পাঁচজন মারা গেছেন। নিহতরা হলেন ঢালচরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৩৫) ও তাঁর শিশুপুত্র রায়হান (১২), মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়নের মো. খালেক মাঝি (২৮), দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের শাহ আলম মাঝি (৫০) ও একই এলাকার অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক ব্যক্তি। সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মধ্যে নিখোঁজ রয়েছেন আরো অন্তত তিন শতাধিক মাঝি। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মনপুরা থানার ওসি নরেশ কর্মকার কালের কণ্ঠকে জানান, সকাল ৯টার দিকে সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর এলাকা থেকে আব্দুল খালেকের লাশ এবং দাসেরহাট এলাকা থেকে শাহে আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মনপুরা থানার ওসি নরেশ কর্মকার বহু জেলের নিখোঁজ থাকার কথা নিশ্চিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে নদীতে পুলিশ সদস্যদের নামানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী দলও উদ্ধার এবং নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম।
গতকাল বিকেল পৌনে ৩টায় ভোলার জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঝড়ে চরফ্যাশনে দুজন এবং মনপুরায় একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আরো অনেক জেলে নিখোঁজ রয়েছে।' তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মনপুরায় ৩০ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং চরফ্যাশনে ১০ টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটওয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, বুধবার রাত ৮টা থেকে ঝড় শুরু হয়, যা থেমে থেমে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে। ঢালচর ইউনিয়নের মৎস্য আড়তদার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বুধবার সকালে ঢালচর থেকে হেজু বেপারীর একটি ও আবু তাহের মাঝির একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০-২৫টি ট্রলার নিয়ে তিন শতাধিক মাঝি মাছ ধরতে যান। তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচজন তীরে ফিরে এলেও ঝড়ের কবলে পড়ে বাকি জেলেরা নিখোঁজ হয়েছেন।
ভোলায় তিন শতাধিক মাঝি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল বিকেল ৩টায় মো. মিরাজ, আ. রব, জসিম, নুরু, নিরব, মালেক, মাইনুদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন, কালাম, ইউছুফ, হানিফ, জাহাঙ্গীর, মহিউদ্দিন, বেলাল, মফিজ, বশির, দুলাল, ইসমাইল, সালাম, আ. হাই, খোকন, সেলিম, তৈয়ব আলী, হারুন ব্যাপারী ও তরিক এই কজনের নাম পাওয়া যায়। অনেকেই আবার থানার পুলিশের কাছে গিয়ে তাঁদের নিখোঁজ স্বজনদের নাম লেখাচ্ছেন। থানা ও উপজেলা প্রশাসন নিখোঁজদের সন্ধানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-আলম ঝড়ে একজনের প্রাণহানির তথ্য দিয়ে বলেন, 'কতজন জেলে নিখোঁজ রয়েছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। সাগরে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় নিখোঁজ জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।'
হাজিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দীপক বলেন, সত্তর সালের বন্যায় যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে এর চেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, যা কেউ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। তবে আমরা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তাসহ জেলেদের উদ্ধারের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।' এদিকে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব ঢাকা থেকে মনপুরায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। একজন ক্ষতিগ্রস্তকেও না খেয়ে কষ্ট পেতে দেওয়া হবে না।
সন্দ্বীপে চার প্রাণহানি : চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরের আকস্মিক ঝড়ে গাছচাপা পড়ে চারজন নিহত এবং তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কেউ নিখোঁজ আছে কি না সেই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নের মো. শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমিন (৩৫), সন্তোষপুর ইউনিয়নের মৃত মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী খইদুন নূর বেগম (৬৫), সন্দ্বীপ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সৌরভ দাশের ছেলে হরে কৃষ্ণ অধিকারী ওরফে বৈষ্ণব (৫৫) এবং মিরসরাই উপজেলার পূর্ব কিসমত জাফরাবাদ গ্রামের মৃত রসনুজ্জামান সামশুল হক (৬০) মারা যান। এ ছাড়া মিরসরাইয়ের হিংগুলি ইউনিয়নের পারুল বালা নাথ (৫৫), টিনের চালের নিচে চাপা পড়ে কাটাছড়া ইউনিয়নের মফিজ উদ্দিন (২৫) এবং গাছচাপা পড়ে ইছাখালী ইউনিয়নের মাহানা আক্তার (৯) আহত হয়।
কালরাত, ভয়াল স্মৃতি : বরিশালে কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক দ্বীপ জেলা ভোলার মনপুরা আর চরফ্যাশন উপজেলায় ঝড়ের প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। জেলেরা মেঘনায় মাছ ধরায় ব্যস্ত। হঠাৎ করেই মেঘনা ভয়াবহ রূপ নিলে জেলেরা বুঝে যান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসন্ন। এরপর মেঘনায় অবস্থানরত কয়েক হাজার জেলে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে ছোটেন। ইতিমধ্যে কয়েক শ জেলে চরগুলোর ঢিবিতে (সাইক্লোন শেল্টার) আশ্রয় নিয়েছেন। জেলেদের কেউ কেউ মেঘনার কিনারের বনের মধ্যে খালগুলোতে বা চরে নৌকাগুলো সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রেখেছেন। বাকিরা তখনো চরে বা ট্রলারে অবস্থান করে নিরাপত্তার কাজ করছেন।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যরাতে হঠাৎ ঝড় প্রচণ্ড বেগ নেয়। কয়েক ফুট উচ্চতার পানি নৌকায় আছড়ে পড়ে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড গতির বাতাস নিমিষেই অনেক নৌকা ডুবিয়ে দেয়।
ঝড়ের কবলে পড়া মনপুরার জেলে আ. কাদের কাঁদতে কাঁদতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যে জাল টানার পয়সা দিয়ে খাইয়ে-পইরা ছেলেরে এত বড় হরছি। হেই জালের ইগ্যা ছেলেডা মাইরা গেল।' ঘূর্ণিঝড়ে ছেলের মৃত্যুতে এখন তাঁর গোটা পরিবার বিধ্বস্ত। এই পরিবারের মতো মনপুরা আর চরফ্যাশনের মেঘনা তীরের জেলে পরিবারে এখন মাতম চলছে।
গতকাল দুপুরে মনপুরা খেয়াঘাটে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তাঁর বাবা আলী হোসেন ঝড়ের সময় নদীতে ছিলেন। তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভোর থেকেই এই ঘাটে অপেক্ষা করছেন বাবার ফিরে আসার আশায়। জাকিরের মতো আরো জেলে পরিবারসহ অসংখ্য মানুষ একই অপেক্ষায়।
ভোলায় ফিরে আসা জেলে আলী হোসেন, জমির শিকদার, তেফাজ্জেল হোসেন, মানিক মৃধা মনপুরার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, 'অন্তত ৪০০ ট্রলারের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি।' এসব ট্রলারে প্রায় দেড় হাজার মাঝিমাল্লা ছিলেন বলে জেলেরা দাবি করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, আবহাওয়া দপ্তর সংকেত দেওয়ার আগে থেকেই বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার মোহনা উত্তাল ছিল। আর সর্বোচ্চ সংকেত দেওয়া হয়েছে ৩ নম্বর। জানা গেছে, সংকেত জারির পর থেকেই ট্রলার মালিক সমিতি ট্রলারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু এখনো অনেক ট্রলারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া দপ্তর সংকেত জারি করার আগে থেকেই সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল ছিল অভিযোগ করে জেলেরা বলেন, মেঘনায় ঝোড়ো হাওয়া শুরু হলে কিছু ট্রলার আগেভাগে নিরাপদ অবস্থানে চলে যায়। তবে বেশির ভাগই আবহাওয়া দপ্তরের সংকেত পাওয়ার পর নিরাপদ গন্তব্যে ছুটতে থাকে। ফলে অনেক ট্রলার ঝোড়ো হওয়ার কবলে পড়ে।
এদিকে সাগর এখনো উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ বাসসকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং ভোলা ও ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

No comments

Powered by Blogger.