সময়ের প্রতিবিম্ব- বিদেশিদের সম্মাননা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি সমীপে by এবিএম মূসা

বছরের আট মাসের ছয় মাস কাটিয়েছি ঢাকা, দিল্লি আর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে। কেবিনের বিছানায় শুয়ে যতখানি শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছি, তার চেয়ে মানসিক দুশ্চিন্তার অস্থিরতা ছিল অনেক বেশি। দেশে সম্প্রতি উপর্যুপরি সংঘটিত ঘটনাবলি নিয়ে আমি প্রথম আলোতে ভাবনা সব উজাড় করে দিতে পারছি না।


টেলিভিশন টক শোতে যাওয়া হয় না। অনেকখানি সুস্থ হয়ে বাসায় এসে ধাতস্থ হয়ে না-পড়া খবরগুলো পড়ছিলাম। পড়লাম হলমার্ক নিয়ে সরকারি মহলের নাটকীয়তার বিবরণ। পড়েছি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে জন্ম নেওয়া একটি রাষ্ট্রের বিশেষ অঞ্চলে তাণ্ডবতার নানা রূপে প্রকাশিত বিবরণাদি। বিছানায় শুয়ে চার-পাঁচ দিন ভাবছিলাম, ‘ওঁরা কেউ এদ্দিন সেখানে যাচ্ছেন না কেন?’
অবশেষে তাঁরা গিয়েছেন, যত না দেখেছেন তার চেয়ে বেশি বলেছেন। বিরোধী দলের ছিদ্রান্বেষী প্রতিনিধি গেছেন মনে হলো তদন্তের নামে সরকারি দলের ব্যর্থতা আর গাফিলতির বিবরণ সংগ্রহ করতে। সরকারের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও ঝটিকা সফরে গিয়েছিলেন। মনে হয়েছে, তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ঘটনার পেছনে সরকারি বা দলীয় ব্যক্তিদের উসকানির যেসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রশমিত করতে অথবা ভুলিয়ে দিতে। প্রধানমন্ত্রী গেলেন, আর বলে এলেন, ‘বিরোধী দলের একজন স্থানীয় সাংসদ এটি ঘটিয়েছে, উসকানি দিয়েছে।’ ব্যস, তদন্ত ও তাণ্ডবের জন্য দোষীদের খুঁজে বের করার ল্যাঠা চুকে গেল। এরপর আর এ নিয়ে সরকারের প্রশাসন, যাদের দিকে গণমাধ্যমের প্রাথমিক অঙ্গুলি নির্দেশ ছিল, তারা নিশ্চিন্ত হতে পারে। টেকনাফ-রামু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় নেবে, তবে গণমাধ্যমে নির্যাতিতদের সূত্রে প্রকাশিত খবরের প্রতিক্রিয়ায় ‘ক্লোজ’ হওয়া কর্মকর্তারা আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন। কারণ, যখন প্রধানমন্ত্রীই সব জেনে গেছেন, তখন তদন্ত আর অপরাধী খোঁজের বিষয়টি ‘ক্লোজ’ করা যেতে পারে। এখন বাকি রইল তাঁর ধারণাকৃত অপরাধীদের, ষড়যন্ত্রকারী ও উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার, রিমান্ড আর তদন্তের সীমাহীন গতিধারা। হলমার্ক আর সোনালী ব্যাংকের লুটেরাদের নিয়ে আপাতত কিছু ত্বরিত মন্তব্য করব না, এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে যা বলার বলব।
আজ প্রধানত যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে বসেছি, তা প্রতিবেদনের শিরোনামে রয়েছে, ৩ অক্টোবর প্রথম আলোর ভেতরের পাতায় সামান্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। ‘শিরোনাম’ মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা পাবেন ১৫০ বিদেশি রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। এই আমন্ত্রিতদের সবার না হোক কারও কারও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কতখানি অবদান ছিল, তা কারা অনুসন্ধান করে, কোন অবিশ্বস্ত বা বিশ্বস্ত সূত্রে জেনে তালিকা তৈরি করেছেন, জানি না। ছোট্ট খবরে ছাপা সেই তালিকা নিয়ে আমার মাথা ঘামানোর কারণ ২০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান স্বয়ং মনোনীত এসব বিদেশি ব্যক্তিত্ব বা তাঁদের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন। জানি, এই তালিকা তাঁর তৈরি নয়, প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেই তালিকাটি যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁদের এই ব্যক্তিত্বদের ‘অবদান’ অথবা ‘অপদান’ সম্পর্কে কতখানি ধারণা, জ্ঞান বা তথ্য আছে, তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। তালিকা নিয়ে আমার আপত্তি কিঞ্চিৎ উষ্মা ও দুঃখবোধের কারণ, রাষ্ট্রপতি এই সম্মাননা নিজ হাতে প্রদান করবেন, অথচ কারও কারও এটি প্রাপ্য নয়। আবার অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের পাওয়ার কথা, তাঁরা পাবেন না।
তালিকা নিয়ে আমার আপত্তি আর অভিমান ব্যাখ্যা করছি। প্রথমত, একাত্তরে মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের দুটি কার্যালয় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থিয়েটার রোডে, বিদেশি কার্যক্রম তথা পররাষ্ট্র বিষয়-সম্পর্কীয় যোগাযোগ, প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো সার্কাস এভিনিউতে সাবেক বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার ভবনে ছিল প্রধান তথ্যকেন্দ্র, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রও বটে। বিদেশি সংবাদদাতা, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি মুক্তাঞ্চলের খবরাদি সংগ্রহ করতেন এখান থেকে। প্রচারকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সাবেক উপ-প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। মুক্তাঞ্চলে যেতে হলে বিশেষ ব্যবস্থায়, এখান থেকে ভারত সরকারের অনেক নিরাপত্তাব্যবস্থা বাধাবিপত্তির ফাঁকফোকর দিয়ে বৈদেশিক প্রচারণা বিভাগ থেকে যাঁরা সব বিদেশিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, এমনকি যুদ্ধাঞ্চলে নিয়ে যেতেন, কয়েকজন ছিলেন— ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মওদুদ আহমদ ও আরও কয়েকজন জয় বাংলা পত্রিকার সংবাদদাতা। কয়েক বছর আগে প্রথম আলোতে ‘মুক্তিযুদ্ধের মিডিয়া সেন্টার’ শিরোনামে একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম এসপ্লানেডের গ্রান্ড হোটেলে সন্ধ্যার পর সব বিদেশি সংবাদদাতা সংগৃহীত খবরাখবর আদান-প্রদান করতেন। ইউপিআই প্রতিনিধি অজিত দাস একাত্তরের নয় মাস ছিলেন জিল্লুর ভাই ও আইভি আপার অকৃত্রিম বন্ধু ও সবকিছুর সাথি। ফোর্ট উইলিয়ামে ভারতীয় জেনারেল জ্যাকবের প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আমাকে নিয়ে যেতেন। আমি তখন বিদেশি সংবাদমাধ্যম লন্ডনের সানডে টাইমস, টাইমস-এর মাধ্যমে বিবিসির প্রতিনিধিত্ব করি। জিল্লুর ভাই ও আইভি আপার অকৃত্রিম বন্ধু সেই অজিতদার নাম সম্মাননা তালিকায় নেই।
দ্বিতীয়ত, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অর্থ, অস্ত্র, ত্রাণ, নৈতিক সমর্থন ও রাজনৈতিক-কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে যাঁরা সীমাহীন অবদান রেখেছেন, তাঁদের সবাইকে আমরা এত দিন পূর্ণ সম্মান দিইনি, সেই অপরাধবোধ দূর করতে শেখ হাসিনা সরকার যে অনবদ্য পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমাদের নিজেদের কৃতজ্ঞ জাতি বলে গৌরবান্বিত করেছে। কিন্তু তাঁদের সবার প্রকৃত ভূমিকা বর্তমান সরকারের অমাত্যদের জানা আছে কী? সাংবাদিকদের প্রসঙ্গ পরে আসবে। আমি যখন ১৯৭২ সালে বিবিসির পক্ষে ইন্দিরাজির একমাত্র সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম, তখন তৎকালীন জনসংঘ (বর্তমানে বিজেপি) নেতাদের ভূমিকা কী ছিল, জানতে চেয়েছিলাম। ইন্দিরাজি মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘ইসলোগোনে বোলাথা উসাকি বাপনে এক পাকিস্তান বানায়াথা, ইয়ে লাড়কি দো পাকিস্তান বানায়গি।’ তাদের একজনকে সম্মানিত করা হবে। একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চীনপন্থীরা প্রচার করেছিল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ‘দুই কুকুরের লড়াই’। পশ্চিম বাংলায় মাওবাদী আদর্শের অনেক অনুসারী সেই মনোভাবের প্রতিধ্বনি করেছিলেন। এমনও বলতেন, ‘জয় বাংলা সার্কাস আর থিয়েটার’ চলছে মুজিবনগর সরকারের নামে। তাঁদের কাউকে কি জিল্লুর ভাই স্বস্তি নিয়ে পদক পরাতে পারবেন?
সম্মাননার জন্য বিবেচ্য কোনো পাকিস্তানি নামই বলি না কেন? মশহুর কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ শায়ের লিখেছিলেন অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে। অথচ একাত্তরে বাঙালিদের প্রতি একান্তে সহানুভূতি জানানোর জন্য পাকিস্তান টাইমস-এ আমার বন্ধু ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল্লাহ মালিককে ১০০ বেত্রদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে মানবাধিকারকর্মী, বন্ধু-সাংবাদিক আই-এ-রহমানকে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা নির্যাতন করেছে। ডন-এর মহজাহার আলী খান ও আই-এ-নকভি চাকরি হারিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের আমলারা তাঁদের কজনের নাম মনে রেখেছেন?
পশ্চিমা সাংবাদিক পিটার হ্যাজেলহার্টের নাম আছে, নেই বিবিসির ব্রায়ান ব্যারন। মার্কিন বার্তা সংস্থা ইউপিআইয়ের আর্নল্ড জেটলিন, যশোরের চৌগাছায় পাকিস্তানিদের শেলের টুকরায় আহত হয়েছিলেন। তালিকায় টনি ক্লিকটন আছেন। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা দেখে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে সানডে টাইমস-এর পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপী প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, ‘ধর্ষিতা বাংলাদেশ’, রেপ অব বাংলাদেশ পরবর্তীকালে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে, তাঁর নাম নেই। পত্রিকাটির বাংলাদেশপ্রেমী সম্পাদক হ্যারি ইভান্সের খোঁজ কেউ নেননি। মার্কিন সাংবাদিক পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সিডনি শ্যানবার্গ আর ওয়াশিংটনের ডেইলি হিউম-এর ব্রাডশায়ারের নাম বাদ পড়াটাও হবে দুঃখজনক।
জিল্লুর ভাইয়ের সঙ্গে এঁদের অনেকের দেখা হয়েছে অজিত দাসের এসপ্লেনেড অফিসে। তাঁরাই তাঁকে বলেছেন, নোংরা কাদায় মাখামাখি অবস্থায় পূতিগন্ধময় পরিবেশে আইভি রহমানকে শরণার্থী শিবিরে ডায়রিয়া রোগীর সেবা করতে দেখে এসেছেন। দু-একজন বিদেশে নিজস্ব মাধ্যমে সেই চিত্রও ছেপেছেন। জাপানে নিশিকাতা তাঁর টেলিভিশন এনএইচকেতে দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন মার্কিন টিভি এনবিসির প্রতিনিধি ও ক্যামেরাম্যান ওয়াটসন।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাহাত্তরে তাঁদের দু-একজনকে আইভি আপা ঢাকার বাসায় স্বল্পপরিসরে পরম আন্তরিকতার সঙ্গে আপ্যায়নও করেছিলেন। আমার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে অজিত দাস এসেছেন শুনে জিল্লুর ভাই ও ভাবি ছুটে এসেছিলেন এঁদের ও আমার আমন্ত্রিত কলকাতার কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে গল্প করতে।
তালিকা তৈরির মুনশিদের একটি প্রশ্ন করছি, যা আমার নিজেকেও বিব্রত করে। মার্ক টালি কি কখনো মুজিবনগরে একাত্তরে এসেছিলেন? মার্ককে জিজ্ঞেস করলে তিনিই বলবেন, না, বাহাত্তরের পর তিনি ভারত গেছেন। তবে তিনি, লন্ডনে বিবিসি ইস্টার্ন সার্ভিসে উইলিয়াম ক্রলি, সিরাজুর রহমান, প্রয়াত নুরুল ইসলাম, সৈয়দ শামসুল হক পালাক্রমে আমাদের পাঠানো সংবাদ বিশ্লেষণ করতেন। ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রীলঙ্কার তারাজি ভিটাজি, ম্যাগসাইসাইপ্রাপ্ত কলকাতার অমিতাভ চৌধুরী, যিনি শরণার্থী সাংবাদিকদের জন্য ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা সংগ্রহ করেছিলেন; অনেককে, আমিও তাঁদের একজন, অবরুদ্ধ এলাকা থেকে নানা কৌশলে উদ্ধার করেছিলেন। তাঁদের কয়জনের খোঁজ করেছেন তালিকাপ্রণেতারা? রাষ্ট্রপতির সম্মাননা এঁরা পাবেন না! অথচ কতখানি সহমর্মিতা ছিল বিদেশি সাংবাদিকদের এই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি! দীর্ঘ নয় মাস এসব সাংবাদিক কলকাতা ও রণাঙ্গন থেকে স্বীয় মাধ্যমে অনেক বিবরণ, কাহিনি, তথ্য পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু কস্মিনকালেও বাইরের জগৎকে জানাননি, ‘মুজিবনগর কলিকাতায়।’ পাকিস্তানিরা এই রসদটি পেলে, মুজিবনগর সরকার নিয়ে পাল্টা প্রচারণার এক চরম হাতিয়ার পেত। সরকার যে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা দিচ্ছে, সে জন্য গভীর সন্তোষ প্রকাশ করছি। কিন্তু যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের জন্য মনোবেদনা থেকেই যাবে।
এবার প্রতিবেদনটির শিরোনামের তাৎপর্য এবং এ নিয়ে জিল্লুুর ভাইয়ের প্রতি অভিমানের কারণটি ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহায়তা ও সমর্থনদানকারীদের সঙ্গে জিল্লুর ভাই ও আমার শ্রদ্ধেয়া জান্নাতবাসী আইভি আপার আন্তরিক ও দরদি সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার পর আমি প্রথম আলোতে তা নিয়ে একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছিলাম। প্রতিবছরই তা করে থাকি। এবার হাসপাতালে শয্যাশায়ী থাকার কারণে আমি সেই শ্রদ্ধা উৎসর্গ করতে পারিনি বলে মনস্তাপ রয়েছে। সম্মাননার তালিকা পড়ে সে মনস্তাপ আরও বেড়েছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। দু-তিন মাস আগে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতির সময়ে একদিন সকালবেলা বঙ্গভবন থেকে একটি টেলিফোন পেলাম। একটু বিস্মিত হলাম, যখন অপর প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রপতির সচিব জানালেন, ‘মূসা সাহেব, কলিকাতা থেকে জনৈক অসিত দাস এসেছেন। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির স্নেহভাজন মেহমান, তাঁর সঙ্গে কথা বলুন।’ অপর প্রান্ত থেকে অসিত বলল, ‘কাকা, নমস্কার, আমি অসিত, স্বর্গত অজিত দাসের ছেলে। এখানে এসেছি একটি ব্রাহ্মমন্দির দেখতে, কেউ খোঁজ দিতে পারছে না।’ অসিতকে জানালাম, সদরঘাটে একটি শত বছরের ব্রাহ্মমন্দির আছে, আমার বন্ধু প্রাণেশ সমদ্দার এর পরিচালক।
গণভবনের মেহমান অজিতদার ছেলে একসময়ে চলে গেল। নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল অতীত দিনের স্মৃতি। অজিতদা তাঁর পুরোনো অস্টিন গাড়িতে প্রায়ই আইভি আপাকে সল্টলেকের একটি শরণার্থী শিবির থেকে আরেকটিতে নিয়ে গেছেন। অবশ্য প্রতিদিন নয়, আইভি রহমান বাসের অযোগ্য তৎকালীন সল্টলেকে (এখন অভিজাত এলাকা) একনাগাড়ে এখানকার শরণার্থী শিবিরে সাত-আট মাস কাটিয়েছেন পূতিগন্ধময় পরিবেশে দুর্গতদের মাঝে। আইভি আপাকে শিবির থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে অজিতদা কাদা-বমি-বিষ্ঠা মাখানো শাড়িটিও নিয়ে গেছেন ধোয়ার জন্য। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সেই অজিতদা কেন উপেক্ষিত রয়ে গেলেন?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.