শুভ জন্মদিন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় by উমর ফারুক

সমসাময়িক যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নজরকাড়া। এর বাহ্যিক অবয়ব দূর থেকে ঈর্ষার জন্ম দেয়। অনেক বহুতল ভবন ইতিমধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো নিয়ে সমালোচনা বেশ পুরনো।


ছোট ছোট শ্রেণীকক্ষ আর আবাসিক কক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কতখানি বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে তা নিয়ে কঠোর সমালোচনা আছে দীর্ঘদিন ধরে। তাহলে কি এই অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে কেবলই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য? ভাবার সুযোগ আছে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে ঘিরে। হওয়া উচিত শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তা কতখানি হয়েছে সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ চার বছরে তার গবেষণা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। এই দীর্ঘদিনে আমরা কোনো জার্নাল দেখিনি, এমনকি কোনো উন্নতমানের প্রকাশনাও আমাদের নজরে আসেনি। গবেষণার জন্য ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট থকলেও কয়েক মাস আগে এমফিল ও পিএইচডির একটি বিজ্ঞাপন দিয়েই তাদের দীর্ঘদিনের কর্মযজ্ঞ শেষ করেছে। ব্যাপারটা এমন যে, একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেবল ক্লাস নেওয়ার জন্য। এমনিতেই গবেষণার সুযোগ নেই, এর ওপর ১৫-২১ ক্রেডিট ক্লাস। পাঁচটি ব্যাচ বিদ্যমান থাকায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একটি বিভাগের শিক্ষকের সংখ্যা ত্রিশের বেশি, তখন চারটি ব্যাচের জন্য অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে শিক্ষক মাত্র ৫ জন। আর সঙ্গে অন্য বিভাগে অতিথি শিক্ষক হওয়ার এক বাড়তি ঝামেলা। ক্লাসের মান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া মাঝে মধ্যে অসাধ্যই বটে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনয়নে দল একটি বড় বিবেচনা। ফলে উপাচার্যের পদ রক্ষায় দলীয়করণের আখড়া হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আত্মীয়, দলীয় ক্যাডার কিংবা একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকের হাতে চলে যেতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই অভিযোগের কাতারে বেগম রোকেয়ার নামও আছে।
সর্দারপাড়া ব্রিজ অথবা পার্কের মোড় পরিচয় করিয়ে দেয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু সময় একদিন বদলাবে। শিক্ষার্থীরা একদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হয়ে উঠবে। শিক্ষা-গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হবে বেগম রোকেয়া। রংপুর তথা পুরো উত্তরবঙ্গকে পরিচয় করিয়ে দেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। জানি না এই লেখার জন্য আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা দাবি করা হবে কি-না। নীতিমালার নামে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কণ্ঠ রোধ করারও চেষ্টা যে চলছে (প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর ২০১২, উপসম্পাদকীয় 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কোন পথে', নূরন্নবী শান্ত)। খড়্গের চিন্তা না করেই সত্য প্রকাশ করতে চাই। তবু কোটি মানুষের ট্যাক্সে পরিচালিত আর উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার প্রকৃত অবয়ব ফিরে পাক।
নানা অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। পত্রিকায় নেতিবাচক খবর পড়তে পড়তে প্রিয় কর্মস্থলের জন্য দুঃখ অনুভব করি। আমরা সবচেয়ে খুশি হবো, একটি বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অর্পিত সব কলঙ্কমুক্ত হলে। তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাঁচবে আর বিব্রত হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।
নবজাতক একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি কিছু শঙ্কাও ভর করেছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায়। অনেক প্রতিবন্ধকতা উতরে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে নবাগত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি মডেল হোক। জন্মদিনে শুভ কামনা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য। অনেক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পথচলা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো অবস্থাতেই ভুল পথ কাম্য নয়।
faruque1712@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.