ইসলামী আরবী ভার্সিটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন- এমডি হিসেবে ড. ইউনূস যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন তা বৈধ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত

ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১২-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ অধ্যাদেশ সংশোধন করে আবেদনের সময়সীমা ৩০০ দিন বা ১০ মাস করা হয়েছে।


বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন ভূইঞা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসবিষয়ক সরকারের সিদ্ধান্তর পর দেশ এবং দেশের বাইরের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আজকের বৈঠকে কোন আলোচনা হয়নি। তবে গত বৈঠকের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার মনে করছে তারা গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কোন হস্তক্ষেপ করছেন না। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর তার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য কোন কোন পত্রিকা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। চাকরি বিধি অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরির সময়সীমা ৬০ বছর এটি উচ্চ আদালতে ফয়সালা হয়েছে। সরকার নতুন করে এ ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত সময় ব্যাংকটিতে যে বেতন ভাতা নিয়েছেন তা বৈধ হয়েছে কি না, তার পরিমাণ কত শুধু তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় এফিলিয়েটিং (অনুমোদনকারী) বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১২ উত্থাপন করলে মন্ত্রিসভা এতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। তবে এফিলিয়েটিং শব্দটি তেমন প্রচলিত না হওয়ায় নামের ক্ষেত্রে এই শব্দটি না রাখার বিষয়ে মতামত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ কার্য সম্পাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ ফাজিল এবং কামিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ হবে ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন দেয়া, অনুমোদন বাতিল করা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, ডিগ্রী প্রদান করা।
মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের পর এখন আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য প্রেরণ করা হবে। মতামত পাওয়া গেলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। তবে সরকারী কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না। দেশে কামিল এবং ফাজিল পর্যায়ের এক হাজার ৯০০ মাদ্রাসা রয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন জমিয়াতুল মোদারেছীন বহু বছর ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে এ স্তরের শিক্ষার সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পৃথক একটি মাদ্রাসা অধিদফতর গঠন করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ অর্থাৎ ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তমানে কুষ্টিয়াস্থ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ বিশাল দায়িত্ব পালন দুরূহ। সঙ্গত কারণে কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি অনুমোদনকারী (এফিলিয়েটিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। শিক্ষানীতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে গত আগস্টে দ্রুত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান জমিয়াতুল মোদারেছীনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়ে তাদের আশ্বাস দেন।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী এ কমিটির আহ্বায়ক করে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ থাকবেন। উপাচার্যের পদবি হতে পারে ‘গ্র্যান্ড মুফতি।’ রাজধানী ঢাকাতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হবে। উচ্চশিক্ষা প্রাণকারী মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে। পাশাপাশি কোরান, হাদিস, ফিকাহ, তাজবিদ, শরীয়তসহ নানা বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম তৈরি, পাঠদান ও ডিগ্রী দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের আগে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সব ধরনের ডিগ্রী দিত মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ডিগ্রী দেয় ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। আর ‘ফাজিল’ (স্নাতক) ও ‘কামিল’ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী দেয় কুষ্টিয়ার ‘বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।’
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১২ অনুমোদন ॥ বৈঠকের পর সচিব জানান, গেজেট প্রকাশের পর থেকে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পেতে আবেদনের জন্য চার এবং ছয় মাস (দুই ধরনের সম্পদের জন্য) সময় ছিল। কিন্তু এই সময় আবেদন করার জন্য যথেষ্ট নয় বিবেচনা করে গেজেট প্রকাশের পর থেকে উভয় ধরনের সম্পত্তির জন্য আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধি করে ৩০০ দিন বা ১০ মাস করা হয়েছে।
সচিব জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ ৬০ হাজার একর অর্পিত সম্পত্তি রয়েছে, যার গেজেট প্রকাশে অনেক সময় প্রয়োজন। পাশাপাশি নথিপত্রও সংগ্রহ করতে হবে। এ কারণেই মন্ত্রিসভা সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমানে সংসদের অধিবেশন চলমান না থাকায় ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্তটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
এছাড়া গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর ব্রুনাই সফর এবং ২৬ জুন ওয়াশিংটনে গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভের সভায় পরিবেশমন্ত্রীর সফর বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.