অদম্য মেধাবী- প্রতিশ্রুতি পূরণে আরেক ধাপ এগিয়ে

‘প্রথম আলো পাশে না থাকলে আমি লেখাপড়া করতে পারতাম না। কথা দিয়েছিলাম, আবারও জিপিএ-৫ পাব। আমি প্রথম আলোকে দেওয়া আমার কথা রাখতে পেরেছি। তাই আজ আমি ভীষণ খুশি।’ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এভাবেই নিজের অভাবনীয় সাফল্যের কথা প্রকাশ করেছেন রাজশাহীর বাগমারার সাজেদুর রহমান।


চরম দারিদ্র্য ও নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শুধু অধ্যবসায়ের ওপর আস্থা রেখে এগিয়ে গেলে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা আবারও প্রমাণ করেছেন সাজেদুর রহমানের মতো আরও অনেকে। ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তাঁরা। এসব অদম্য মেধাবীর জীবনযুদ্ধের গল্প তখন প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোয়। তাঁদের মধ্য থেকে ৫০ জনকে বাছাই করে শিক্ষাবৃত্তি দেয় প্রথম আলো-ব্র্যাক ব্যাংক অদম্য মেধাবী তহবিল। তাঁদের মধ্য থেকে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অনেকেই জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এরমধ্যে ১৫ জনের সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টার গল্প শুনব আজ:
রাজশাহীর বাগমারা মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাজেদুর রহমান। সাজেদুরের বাবা ওছমান আলী পেশায় রংমিস্ত্রি। ওছমান আলী বলেন, ‘সহযোগিতা না পেলে আমার ছেলের লেখাপড়া হতো না। আমার সঙ্গে হয়তো কাজে নামতে হতো।’ সাজেদুর এখন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
সাজেদুরের মতো চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহার উদ্দিন, সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার আলীপুর গ্রামের আওলাদ হোসেন, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার ইব্রাহিম ও কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার লেলিন চৌধুরী।
ইব্রাহিম ভালো ফলাফল করার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি জীবনে কখনো ঢাকা যাইনি। প্রথম আলো ঢাকায় আমাদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তখন আমি প্রথম ঢাকায় যাই। আমার জন্য সেটি সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে আমি মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম, আমাকে আরও একবার ঢাকায় আসতে হবে আরেকটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য।’
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পিপলেশ্বর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম মানবিক শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি নালিতাবাড়ীর শহীদ নাজমুল সঞ্চৃতি কলেজের মানবিক শাখার ছাত্র ছিলেন। মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলমের মতো জামালপুরের সরিষাবাড়ী কলেজের ছাত্র রকিবুল হাসান, পটুয়াখালীর গলাচিপা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ফেরদাউস ইসলাম ও গোপালগঞ্জ মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী মাছুবা আক্তার মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে তাঁদের কথা রেখেছেন।
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার তাহমিনা আক্তারের জীবনযুদ্ধের গল্প একটু ভিন্ন রকম। নবম শ্রেণীতে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। পারিবারিক কারণে তিন বছর পর বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার লেখাপড়া শুরু করে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মালতীডাঙ্গা পশ্চিমপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী লিপি খাতুনও অনেক কষ্ট করে বাণিজ্য বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করেছেন।
দুই বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন সাব্বির হোসেন অন্যের জমিতে ধান কাটার সময় জিপিএ-৫ পাওয়ার খুশির খবরটি পেয়েছিলেন। সেই সাব্বির এবার হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সাব্বির প্রকৌশলী হতে চান। প্রকৌশলী হতে চান নীলফামারীর ডোমার উপজেলার রুবেল ইসলাম ও নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার রাকিব উদ্দিনও।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুর গ্রামের সুজন আলীর মেয়ে রুনা লায়লা ফলাফল প্রকাশের দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি প্রথম আলোর কাছে দেওয়া আমার অঙ্গীকার পূরণ করতে পেরেছি।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মামুনুর রশীদ, বাগমারা (রাজশাহী); খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ; সালেহ আহমেদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ); সুমেল সারাফত, মংলা (বাগেরহাট); সফি খান, কুড়িগ্রাম; দেবাশীষ সাহা রায়, শেরপুর; শফিকুল ইসলাম, সরিষাবাড়ী (জামালপুর); ইশরাত হোসেন, গলাচিপা (পটুয়াখালী), সুব্রত সাহা, গোপালগঞ্জ; শহীদুল ইসলাম, পঞ্চগড়; এনামুল হক, সিরাজগঞ্জ; মোহাম্মদ শাহজাহান, হাজীগঞ্জ; (চাঁদপুর); মীর মাহমুদুল হাসান; নীলফামারী; মানিক মজুমদার, হাতিয়া (নোয়াখালী) ও তুহিন আরন্য, মেহেরপুর]

No comments

Powered by Blogger.