মোবাইলে নারীর মিষ্টি কথায় বিভোর হবেন না

সাবধান! মোবাইলে নারীর মিষ্টি কথায় বিভোর হবেন না। ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। আপনি বা আপনার সন্তান অপহৃত হতে পারেন অপহরণকারী চক্রের হাতে। প্রেমের ফাঁদ পেতে অথবা অনৈতিক কাজে রাজি হয়ে আপনাকে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলতে পারে যে কোনো সময়।

ঠিক এমনটি ঘটনা ঘটেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল আলমের (৪৬) ভাগ্যে। তার বাবার নাম মৃত আবুল কাওছার। সাথী নামের এক নারী মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদ পেতে তাকে ডেকে নেয় পাবনার সাথিয়া উপজেলার ভরাট গ্রামে। সেখানে গেলে তাকে অপহরণ করে একটি অপহরণকারী চক্র। সাথীও ওই চক্রের একজন সদস্য।
এরপর পরিবারের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের আগেই অপহরণের সঙ্গে জড়িত অপহরণ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মেহেরপুর ডিবি পুলিশ। রোববার বিকেলে পাবনার সাথিয়া উপজেলা শহর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এদের একজন ভরাট গ্রামের সোহরাব দেওয়ানের ছেলে সোহাগ (২৫) ও একই গ্রামের মান্নান চৌধুরীর ছেলে সিয়াম (২৫)। সোহাগ স্থানীয় কাশিনাথপুর ডিগ্রি কলেজের বিবিএস শ্রেনীর ছাত্র এবং সিয়াম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামের ছাত্র। তবে সাথীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

অপহৃত রফিকুল জানায়, একদিন মধ্য রাতে মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে এক নারীর মিষ্টি কথা। নাম তার সাথী। বাড়ি পাবনার সাথিয়া উপজেলার ভরাট গ্রামে। সে প্রায়ই রাতে ফোন করতো। এক পর্যায়ে শুরু হয় মন দেয়া নেয়া। নারী কন্ঠের মিষ্টি কথায় বিভোর হয়ে পড়ে চার সন্তানের জনক রফিকুল।

গত ২৭ জুলাই সাথীর ডাকে সাড়া দিয়ে ভরাট গ্রামে ছুটে যায় সে। বিকেল তিনটায় সেখানে পৌঁছালে চক্রটি অপহরণ করে তাকে। এরপর পরিবারের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। রফিকুলের পরিবার বিষয়টি মুজিবনগর থানায় জানায় এবং একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। এরপর মাঠে নামে পুলিশ।


মহেরপুর পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকি জানান, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে নিশ্চিত হওয়া যায় চক্রটি পাবনার সাথিয়া উপজেলার ভরাট গ্রামে অবস্থান করছে। পাবনা পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চাইলে তিনি তার ফোর্স দিয়ে দু’টি স্থানে হানা দিয়েও ব্যর্থ হন। এরপর চক্রটিকে ধরতে মেহেরপুর ডিবি পুলিশ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর ফাঁদ পাতে।

রোববার সকাল থেকে ডিবির এসআই কাফরুজ্জামানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সেখানে ওঁৎ পেতে থাকে। বিকেল চারটার দিকে অপহৃত রফিকুলকে সঙ্গে নিয়ে পাবনা জেলা শহরের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে টাকা নিতে যায় সোহাগ, সিয়ামসহ চক্রের আরো এক সদস্য। এ সময় তাদের ঘেরাও করে সোহাগ ও সিয়ামকে আটকসহ রফিকুলকে উদ্ধার করলেও পালিয়ে যায় অপর সদস্য।

আটকের পর অপহৃত রফিকুল ও চক্রের ওই দুই সদস্যকে নিয়ে মেহেরপুর ফিরে আসে ডিবি’র অপারেশন টিম। এ চক্রটি আরো একজনকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আরো জানান, মানুষ ক্রমেই অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপকর্মে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। তাছাড়া সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে সে খবরও রাখা দরকার অভিভাবকদের।

No comments

Powered by Blogger.