বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত কাজে পুরুষের সমান মজুরি অর্ধেক- ন্যায্য পারিশ্রমিক বঞ্চিত নারী শ্রমিক by কামরুজ্জামান বাচ্চু

“পোলা মাইয়া ঘরে রাইক্কা হারাদিন ব্যাডাগো হোমান কাম কইরাও মাইনা পাই হ্যাগো অর্ধেগেরও কোম। ব্যাডাগো যেহানে আড়াই শ’ থেইক্কা তিন শ’ টাহা দেওয়া অয়। হ্যাহানে আমাগো দেওয়া অয় নোব্বই থেইক্কা এক শ’ টাহা।” এ কথাগুলো বলল, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের কোর্ট পাড়ের ৫৫ বছর বয়সী উত্তর রানী।


একই এলাকার রোকেয়া বেগম (৪২) জানায়, সে দোকানে দোকানে পানি টেনে ৫০-৬০ টাকা পায়। প্রতি কলস পানিতে ২ টাকা মজুরি । এক মেয়ে ও ২ ছেলেসহ চারজনের সংসারে খাবার যোগান দিতে পানি টানার কাজ করছে। ইট ভাঙ্গা শ্রমিক হোসনেয়ারা (৫৫) বলল, কন্ট্রাক্টররা ইট ভাঙ্গার জন্য মজুরি দেয়। পিক ১৪ টাকা নম্বর ইট ১১ টাকা, তাতে দৈনিক ৬০-৭০ টাকার কাজ করা যায়। খুব সকালে লেগে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করলে ৭০-৮০ টাকা রোজগার করা যায়। চাল, ডাল, হলুদ, মরিচ ও তেলের যে দাম তা ওই টাকায় পোষায় না। এ উপজেলার নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের শিকার। কৃষি কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে পুরুষের পাশাপাশি এসব নারী শ্রমিক সমান কাজ করলেও মজুরি পাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। অসচ্ছল পরিবারের নারীরা সংসারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ঘরের বাইরে শ্রম বিক্রি করেছে। এসব হতদরিদ্র নারী শ্রমিক কাজ করে পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনের খরচ যোগায়। তাদের নিজেদের জমি না থাকায় পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করে। এই শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে তারা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একজন পুরুষ শ্রমিককে একদিন কাজের জন্য ৩শ’ টাকা মজুরি দেয়া হলেও নারী শ্রমিককে দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১শ’ টাকা। মনে কষ্ট থাকলেও নিরুপায় হয়ে এ পারিশ্রমিক নিয়েই ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরতে হয় তাদের। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের যেসব নারী ঘরের বাইরে কাজ করে তাদের অধিকাংশই বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত। এসব নারী শ্রমিক সাধারণত রাস্তা নির্মাণ, ধানের কল, চালের আড়ত, কুটির শিল্প, মৃৎ শিল্প, ইট ভাঙ্গা, পানি টানা, ক্ষেত-খামার ও ঝিয়ের কাজ করে। কাজে ফাঁকি না দেয়ায় সবাই নারীদের কাজে নিয়োগ দিতেই আগ্রহী। অথচ নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে সামান্য সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারে না। আর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার কারণে অভাব তাদের পিছু ছাড়ে না। শুধু বাউফল নয়, এমন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দেশের বহু এলাকার নারী শ্রমিকরা।
স্থানীয় সরকার অধিদফতরের আওতায় বগা, বাউফল, ালিশুরি, কালাইয়া, নওয়ামালা, আধাবাড়িয়া, সড়ক নির্মাণ কাজে প্রায় ৪ হাজার নারী শ্রমিক ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। তাদের কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দৈনিক হিসাবে মজুরি দেয়া হয় না তাদের । ১৪-১৫ দিন পর মজুরি দেয়া হয়। এমন নারী শ্রমিকও আছে যারা এক বেলা না খেয়ে কাজ করছে। গর হাজির থাকলে তাদের আর কাজ করতে দেয়া হয় না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। কেবল পেটের টানেই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসব দরিদ্র নারী তাদের কোমল হাতে শ্রমের শক্ত হাতিয়ার তুলে নিলেও বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে।

No comments

Powered by Blogger.