রফতানি বন্ধ, নাগালে ইলিশ

কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালী। সেই বাঙালীর খাদ্য তালিকায় ইলিশ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু ইলিশের যেন আজ আকাল। বাজারে বড় আকারের ইলিশ এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। মাঝারি আকারের ইলিশেরও এখন অনেক দাম। তবে অতি সম্প্রতি পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।


ইলিশ রফতানি বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যেই ইলিশের দাম কমতে শুরু করেছে। যেখানে গত সপ্তাহেও এক জোড়া ইলিশ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায় সেখানে এ সপ্তাহে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগামীতে দাম আরও কমবেÑ এমন প্রত্যাশা ইলিশভক্তদের। এছাড়া সব ধরনের সবজির দামও কমছে। নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য নিয়ে যেখানে জনসাধারণের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম সেখানে পণ্যের দাম কমা নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। আমাদের দেশে একবার কোন কিছুর দাম বাড়লে আর খুব একটা কমে না। এবারের রমজানে এর ব্যতিক্রমটাই দেখা গেল। এই প্রবণতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইলিশ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল সেটাও অনেকটা কেটে যাচ্ছে। তবে ইলিশের আকাল একেবারে দূর হয়েছে সেটা বলা যাবে না। এই মৌসুমে বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকার কথা থাকলেও সে তুলনায় নেই। কেউ কি কখনও ভেবেছিল ইলিশের এমন দুর্দিন আসবে? আর তা হবেই না বা কেন? যে পদ্মা নদী ছিল ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র, সেই নদীই এখন প্রায়মৃত।
এখানে ওখানে বড় বড় চর পড়ে একদার প্রমত্তা পদ্মার মৃত্যু প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। শুধু বর্ষাকালের তিন চার মাস ছাড়া সারা বছর নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। দেশের অন্য নদীগুলোরও একই অবস্থা। তাহলে আমাদের প্রিয় মাছ ইলিশ কোথায় যাবে? কোথায় অবাধে তার বংশবৃদ্ধি হবে? যেখানে ছোট জাটকা সহজেই বেড়ে একটি উপাদেয় ইলিশে পরিণত হবে? আসলে গত প্রায় দু’যুগ ধরে যেন ইলিশের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ইলিশ একদিন বিলুপ্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে এখনই ইলিশবান্ধব একটি প্রতিবেশ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইলিশ রক্ষার বিষয়ে নানা উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। ইলিশের এই সঙ্কটের মুহূর্তে ‘ইলিশের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তঃসীমান্ত সংলাপ’-এ একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় ইলিশ নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে এই ঘোষণাটি এসেছে। এই ঘোষণাটি ইলিশকে রক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অনেককেই আশাবাদী করে তুলেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে ভারতের সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা ছাড়া ইলিশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কারণ বাংলদেশ ও ভারতের বেশকিছু অভিন্ন নদী রয়েছে। পদ্মাসহ বেশকিছু নদী ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। দু’-একটি নদীর উজানে বাঁধ দেয়ায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণত স্রোতস্বিনী নদীতে ইলিশ বেশি থাকে। আর নদীতে স্রোত তো দূরের কথা, যদি পর্যাপ্ত পানি না থাকে, তবে ইলিশ বাঁচবে কিভাবে? ফারাক্কা বাঁধের কারণে পশ্চিমবঙ্গে এখন প্রায়শই বন্যা ও নদীভাঙ্গনের ঘটনা ঘটছে। অথচ এ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের পদ্মাসহ কয়েকটি নদীর শীর্ণদশা। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে ইলিশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ শুরু হলে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.