তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন- কর্মকর্তাদের কত গাড়ি দরকার

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গাড়িগুলো বিলাসবহুল। নিশান পেট্রল, পাজেরো, প্রাডো প্রভৃতি গাড়ি সাধারণত কোটিপতিরাই ব্যবহার করেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যেন কোটিপতিদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।


অথচ সিটি করপোরেশনের টাকা আসে যে নগরবাসীর কর থেকে, তাদের কপালে জোটে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, নর্দমা ও পয়োনালার উপচে পড়া বর্জ্যের দুর্গন্ধ। কর্মকর্তাদের সেদিকে নজর নেই।
তাঁরা গাড়ি-বিলাসিতায় ডুবে আছেন! এর চেয়ে বড় অন্যায় আর কী হতে পারে?
সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তাই একটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। ঢাকা সিটি করপোরেশনেও একই বিধান। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যেসব কর্মকর্তার গাড়ি পাওয়ার কথা নয়, তাঁরাও সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজেও করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে বিধি অনুযায়ী যেসব কর্মকর্তার গাড়ি পাওয়ার কথা, তাঁদের অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বৈষম্য যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন ছিল একটি, নির্বাচিত মেয়র ছিলেন একজন। তিনিও নিয়ম ভেঙে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতেন—একটি অফিসের কাজে, আরেকটি বাসার কাজে। এখন উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে দুটি সিটি করপোরেশন, সেই সঙ্গে দ্বিগুণ অপচয়।
আইনের মারপ্যাঁচে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। সেই সুযোগে চেপে বসেছে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন। নির্বাচিতদের স্থান দখল করে সরকারি কর্মকর্তারা আরাম-আয়েসের ব্যবস্থা করে নিচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি করতে হয় নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আমলাদের জবাবদিহি কে করবে? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নিজেই যখন সিটি করপোরেশনের দামি গাড়ি ব্যবহার করেন প্রকল্পের গাড়ি হিসেবে, তাহলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গাড়ি-স্বেচ্ছাচার বন্ধ করবেন কে?
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নাকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি গাড়ির অপব্যবহার নিয়েও তদন্ত করছে। গত রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অপচয়ের বহর। এরপর অন্তত গাড়ি-দুর্নীতির তদন্ত গতি পাবে বলে আশা করা যায়। বড় কর্তাদের দু-তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করা হোক। তা ছাড়া পাজেরো-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গরিব দেশে গরিবি হালে চলাই ভালো।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন, স্যুট-টাই না পরে, হাফ শার্ট পরে অফিস করার পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন কর্মকর্তাদের গাড়ি-বিলাসিতা চলতে পারে না।
আশার কথা, রোববার প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এক সপ্তাহের মধ্যে গাড়ি নিয়ে বৈষম্য ও অনিয়ম দূর করার সংকল্প করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও গাড়ি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। তদন্ত করে নিয়ম ভাঙার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জনগণের টাকার অপচয় বন্ধের এটাই ভালো উপায়।

No comments

Powered by Blogger.