হুমকি দূর করায় কোনো গাফিলতি নয়-জেএমবির লুকানো ক্ষমতা

জেএমবির জঙ্গিদের অস্ত্রভান্ডারে তিন হাজার বোমা, রকেট লঞ্চার ও আত্মঘাতী হামলার সরঞ্জাম থাকার সংবাদ প্রকাশ করেছে গত সোমবারের প্রথম আলো। সংগঠনের প্রধান সাইদুর রহমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে সংবাদসূত্র জানায়। এ ঘটনা সত্য হলে তা অবশ্যই গভীর আশঙ্কার বিষয়।
জঙ্গিবাদ যতটা না রাজনৈতিক মতাদর্শ, তার চেয়ে বেশি নাশকতার ক্ষমতা। এবং জেএমবি ক্রমাগত সেই ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা সাইদুর রহমান অস্ত্র-সরঞ্জাম ও সহযোগীসহ আটক হন। তাঁর গ্রেপ্তারে জেএমবির আরেকটি অধ্যায়ের শেষ হলো বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা অভিমতও জানিয়েছেন। কিন্তু সেই সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছেন, তাতে আশঙ্কা বরং আরও বাড়ে। তাঁদের এমন প্রস্তুতির চিত্র বলে, ২০০৭ সালে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়েও নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি বিলুপ্ত হয়নি। আবার তারা সংগঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গি তৎপরতায় নিয়োজিত একমাত্র সংগঠন কেবল জেএমবি নয়, আরও নানা সংগঠনের ক্রিয়াশীল থাকার সংবাদ গণমাধ্যমে এর আগেও এসেছে।
স্থানীয়ভাবে অস্ত্র ও বোমা বানানো এবং সেসব বানানোর প্রশিক্ষণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী কলাকৌশলের মিল রয়েছে। এটাই ইঙ্গিত দেয় যে জেএমবি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু করছে না। লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে তাদের অনেক যোগাযোগ ও তৎপরতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকেও বিভিন্ন সময় তারা সাহায্য ও সমর্থন লাভ করেছে। যদিও এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা কখনোই কোনো কিছু বদলাতে না পারলেও তাদের দ্বারা কিংবা তাদের ব্যবহার করে যে-কেউ দেশে অস্থিতিশীলতা ও নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। সতর্কতার প্রয়োজন এখানেই। এ কারণেই জঙ্গিদের বিদেশি যোগাযোগ, অর্থের জোগান ইত্যাদি বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষত, নানা কৌশলে অর্থের লেনদেনের দিকেও নজর রাখতে হবে। তাদের হাতে থাকা বোমা ও সরঞ্জাম উদ্ধারের ব্যবস্থা করে হুমকি দূর করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সংঘটিত প্রায় প্রতিটি জঙ্গি নাশকতার ঘটনাই ঘটেছে নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে। ধারণা করা যায়, সাইদুর রহমান কথিত বোমা ও আত্মঘাতী হামলার সরঞ্জামগুলোও তেমন উদ্দেশ্যেই ব্যবহূত হতো। নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে নাশকতা, দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি কিংবা তহবিল গঠনে জাল মুদ্রা ছাপানোর মতো অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষও আগের চেয়ে বেশি সজাগ।
তবে কেবল দমনমূলক কার্যকলাপ নয়, কিছুসংখ্যক মানুষ কেন এ পথে পা বাড়ায়, তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের ভেতরেও সচেতনতা ও প্রতিরোধের মানসিকতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্তরের কোনো অংশ থেকে যাতে তারা সহায়তা না পায়, তাও নিশ্চিত করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.